নওগাঁর ঈদের কেনাকাটায় তোয়াক্কা নেই স্বাস্থ্যবিধির

নওগাঁর পত্নীতলায় আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জমজমাট হয়ে উঠছে বিপনি বিতান গুলো। করোনা ভাইরাস রোধে নানা শর্তে মার্কেট খোলার অনুমতি দিলেও স্বাস্থ্য বিধি মানছে না কেউই। করোনা ভীতি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে মার্কেট ও বিপনি বিতান গুলোতে। অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক। আর থাকলেও তা থুতনিতে বা কানে ঝুলছে।

এদিকে রবিবার দুপুরে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক পরিধান না করার অপরাধে উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা সুলতানার নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার মধইল বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৭জনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানতে প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়িক সমিতি সোচ্চার থাকলেও দোকানে আগত ক্রেতারা মানছে না কোন স্বাস্থ্যবিধি। মার্কেট বা বিপনীবিতান গুলো খুলতে সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাটে যাতায়াত করতে হবে। কিন্তু ঈদ আনন্দে কেনাকাটার তোড়জোড় বাড়ায় উধাও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে বিভিন্ন মার্কেটসহ দোকান গুলোতে চলছে কেনাকাটা। মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই বিপনি বিতান গুলোতে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে মার্কেট গুলোতে উপচে পড়া ভিড় ততই বাড়ছে।

রবিবার উপজেলা সদর নজিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বিভিন্ন মার্কেট, মধইল বাজার এলাকার দোকান সহ অন্যান্য বাজার গুলো ঘুরে দেখা যায়, নানা বয়সী ক্রেতাদের ভিড়। পা ফেলার মতো জায়গা কোথাও নেই। কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। সঙ্গে রয়েছে শিশু-কিশোররাও। ক্রেতারা একে অন্যের গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে কাপড়, কসমেটিকস্, জুতা সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাকাটা করছেন। অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক। আর থাকলেও তা থুতনিতে বা কানে ঝুলছে। হাট বাজার সহ রাস্তার ফুটপাতে বসা দোকানে নিন্ম বিত্ত পরিবারের মানুষ কেনাকাটা করছে। সেখানেও রয়েছে নানা বয়সি ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।

ব্যবসায়ীরা জানায়, এবারে অনেক দেরি করে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। গত বছরের ঈদে করোনার কারণে খুব একটা বেচা কেনা না হলেও এবারে কৃৃষকের ঘরে নতুন ধান ওঠায় কেনাকাটায় উৎসুক হয়ে উঠেছে সর্ব শ্রেণীর মানুষ। এবারে ঈদকে সামনে রেখে কাপড়ের দোকান গুলোতে বাজার দখল করেছে দেশীয় কাপড়। শাড়ি, থ্রি-পিচ, লেহেঙ্গা, শিশুদের টপ, স্কার্ট, ফ্রক সহ হরেক রকম পোশাকে সাজানো হয়েছে বিপনি বিতান গুলো। ছেলেদের পোশাকে হরেক রকমের বর্ণালী কাবলি পাঞ্জাবির চাহিদাই এবার সর্বাধিক। এছাড়াও জিন্স প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন প্যান্টের পাশাপাশি প্রিন্টের শাটর্, চেক শার্ট, এক কালার শার্ট রয়েছে পছন্দের তালিকায়।

নজিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী সামশুল আলম জানান, ক্রেতার চাপে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। মার্কেটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না করোনাকাল যাচ্ছে। এভাবে ক্রেতা আসলে রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি হবে ও দীর্ঘদিন যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে।

কাপড়ের দোকানে আসা গৃহবধূ সারমিন আক্তারের সঙ্গে সন্তানকে নিয়ে মার্কেটে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝুঁকি আছে জানি। কিন্তু কিছু করার নেই। গত বছর ঈদে কিছু কেনাকাটা করতে পারিনি। এবার না করলেই নয়। আর বাসায় কেউ না থাকায় বাধ্য হয়ে সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই আসতে হয়েছে।

আরেক ক্রেতা রুমা বেগম জানান, সঙ্কা নিয়ে মার্কেটে এসেছি। সন্তান ও স্বজনদের জন্য কিনতে হচ্ছে। করোনার ভয় তো আছে তবুও কিনতে হচ্ছে।

একই চিত্র দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ড এলাকার বঙ্গবাজারের কাপড়ের দোকান, কসমেটিকস ও জুতার দোকান গুলোতে। পাশাপশি মুদিখানা দোকান গুলোতেও তেল, চিনি, সেমাই সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।

নজিপুর বাসস্ট্যান্ড বনিক কমিটির সভাপতি শহিদুল আলম বেন্টু বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিধি নিষেধ মানতে আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপশি ক্রেতাদেরও বিধি নিষেধ মানার অনুরোধ করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিটন সরকার জানান, সরকারি বিধি নিষেধ মেনে মার্কেট খুলতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। কেউ তা অমান্য করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।