নওগাঁর বদলগাছীতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যতিক্রমী ‘গোশত সমিতি’

বাংলাদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষেরই দু-একটি করে সমিতি রয়েছে। তারমধ্যে সম-সাময়িক সময়ে লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে মাংস বা গোশত। প্রথমদিকে এ সমিতির কথা শুনে অনেকেই অবাক হলেও বর্তমানে লোকজন এ সমিতি থেকে উপকৃত হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।

নওগাঁ বদলগাছীর গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এ ধরনের মাংসের সমিতি গঠন করা হয়। মাংস সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বাড়ছে মাংস সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিজন সদস্য মাসে মাসে সমিতিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাউল বা অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদুল ফিতরের ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ একত্র করে পশু কেনা হয়। ঈদের দিন বা তার দু-একদিন পূর্বেই এই পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেওয়া হয়।

এতে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবাই বাড়তি আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।

স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম ‘গোশত বা মাংস সমিতি’। অনেকের কাছে ‘গরু সমিতি’ নামেও পরিচিত।

সারা দিন অটো-ভ্যান ও রিকশা চালিয়ে সংসারের ঘানি টানেন উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের কোমারপুর গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন বলেন, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসা ও খাবার খরচসহ সব মিলিয়ে তাকে অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায় সংসার চালাতে হয়। ঈদ এলে সবার কাপড়-চোপড় আর তেল-সেমাই-চিনি কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

এ ছাড়া আদরের সন্তানদের বায়না থাকে ঈদের দিন গোশত খাওয়ার। কিন্তু ভ্যানচালক বাবার ঈদের দিনে সন্তানদের গোশত খাওয়ানোর ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যে কুলায় না। ইতিপূর্বে ঈদের দিন সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে গত কয়েক বছর যাবৎ কোমারপুর ‘গোশত সমিতি’র সদস্য হয়।

উপজেলার সকল গ্রাম,পাড়া মহল্লাতে অনেক সমিতি গড়ে উঠেছে। শবে কদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির পশু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান বলেন, এলাকার মানুষজন সারা বছর টাকা জমিয়ে একটু একটু সঞ্চয় ঈদের দিনে তাদের বেশ বাড়তি আনন্দ দেয়। গোশত ভাগবাটোয়ারা করা, গোশত রান্না করার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এ ধরনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণ সমিতিকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছে।