নরসিংদীর ডাঙ্গায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে যুবলীগের হামলা

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে নরসিংদীর ডাঙ্গায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘরে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।

বুধবার পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কেন্দুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা। প্রতিপক্ষের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন নারী-পুরুষ। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাদল মিয়ার সঙ্গে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুর দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই জের ধরে আজ বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যুবলীগ নেতা দেলুর কর্মকাণ্ড, জমি দখলসহ নানা অনৈতিক কাজে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার আধিপত্য ও দলীয় নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে ডাঙ্গা ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাদল মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই জের ধরে উভয়পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিল। এরই মধ্যে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ঈদের আগের দিন যুবলীগ সভাপতির সমর্থক বিল্লাল হোসেন ইউপি সদস্য বাদলের সমর্থক নূরুকে বেধরক পেটান। পরে নূরুর ভাই ইসমাইল বিল্লালকে চড়-থাপ্পর দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতির সমর্থকরা ও স্থানীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিমের নেতৃত্বে ইসমাইল ও কামালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় যুবলীগ নেতারা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পদক সেলিম ও সভাপতি দেলুর শ্যালক বাবুর নেতৃত্বে তিন শতাধিক লোক রাম দা, চাইনিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ কেন্দুয়া গ্রামে ইউপি সদস্য বাদল মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় প্রতিপক্ষ বাদলের সমর্থক ফজলুল হক, শাহ আলম, মনির হোসেন, আরজু মিয়া, ইমান আলী, ছানা উল্লাহ, নারগিস মেম্বারনী, নুরুজ্জামান, মিস্টার লাল মিয়া, এরশাদ, ইদ্রিস আলী, হারুন মিয়ার বাড়িসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চালায়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ইসমাইলের বাড়িতে। এ সময় সন্ত্রাসীতের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইসমাইলের মা সাফিয়া বেগম, হাতেম মিয়া, আরহান গুরুতর আহত হয়।

এ সময় প্রতিপক্ষরা বাড়িতে থাকা টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ মূলবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আধিপত্য নিয়ে এলাকায় দুটি পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ থাকার কারণে আজ এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা উভয়পক্ষের সাতজনকে আটক করেছি। উভয়পক্ষই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মামলা রুজু হওয়ার পর আমরা প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার পারব।’