নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গেল মাইক্রোবাসের ৭ যাত্রীর, আহত ৪

নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা—সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার ঘাসিরদিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির উপ পরিদর্শক আবুল খায়ের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন— টাংগাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী এলাকার মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক সবুজ (৩০), ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পারগোপারপুর এলাকার আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমিন (২৯), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমিন খান (২৭), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আওয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদী উপজেলার মুলাদী গ্রামের মো: মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান শিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪), জামালপুর সরিষাবাড়ির ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহমেদ (৩৬) ও গাজীপুরের শারাব এলাকার নুরুল মোল্লার ছেলে বাবুল হোসেন (৩৭)।

আহতরা হলেন— সাকিব আহমেদ (২৮), পারভেজ (২৯), দোয়েল (২২) ও মিথুন (৩৫)। হতাহতরা সাভারের ইপিজেড এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেড এর কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে সিলেট ভ্রমনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশ ও নিহতদের স্বজনরা জানান, সাভার ইপিজেড এলাকার এসবি নিটিং এর ১১ জন কর্মকর্তা—কর্মচারী একটি ভাড়া করা হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে সিলেট যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসটি ঢাকা—সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পাথরবাহী ট্রাকের সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ ঘটে। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা ৫ জন নিহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ৬ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মারা যায় আরও ২ জন। পরে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে রাতেই নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্ঘটনা কবলিত দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস থেকে হতাহতদের উদ্ধার করেন। এই দুর্ঘটনার পর ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করে এর চালককে আটক করে। মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ ফাড়িতে রাখা হয়েছে। তবে মাইক্রোবাসের চালক কে ছিলেন তার নাম নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

সাভার ইপিজেড এর এসবি নিটিং লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মীর শেহাব উদ্দিন জাকির বলেন, আমাদের কারখানার চালকসহ ১১ জন স্টাফ ভ্রমনের জন্য সিলেট যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা কবলিত হন। এতে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৪ জনকে ঢাকায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপ—সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে রাতেই দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ আগে স্থানীয়রা হতাহত অবস্থায় ৬ জনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাশার বলেন, রাত আড়াইটার দিকে প্রথমে কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে একজন মৃত ছিল, পরে আরও একজন মারা যায়। ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর আরও ৫ জনের মরদেহ নিয়ে আসা হলে তাদের হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়।

নরসিংদী সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হারন অর রশিদ জানান, সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা ৭ জনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনগতভাবে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে দুর্ঘটনা খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এসময় তিনি আওয়ার নিউজ বিডির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম রুদ্রকে জানান, মাইক্রোবাসটি অন্য কোন গাড়ীকে পাশ কাটিয়ে দ্রুতবেগে যাওয়ার সময় ট্রাকের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। ট্রাকটি জব্দ ও চালক আটক হয়েছে। মাইক্রোবাসের চালকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই দুর্ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।