নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

আগামীকাল বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান প্রধান গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে।

তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আগ্রহ এবং কৌতূহল তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে। যদিও ১০ বছর পর বাংলাদেশের নির্বাচনে দেশটির সব প্রধান রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে।

গত ১০ বছরে যেখানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নির্বাচনী প্রচারণায় বিরোধী জোটের ওপর অভিযান, হামলা এবং সরকারের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে সেখানে চলতি বছরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসবের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার এ কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘুসহ সকল বাংলাদেশি যেন ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। সুশীল সমাজ, পর্যবেক্ষকরা যেন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন সে বিষয়েও আমরা আশাবাদী।’

কয়েকদিন আগে ব্রিটেনের ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এশিয়া এডিটর এডাম উইথনালের লেখা ওই প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের কর্মীদের জন্য এক ধরনের ভয়ের পরিবেশের মধ্যে বাংলাদেশের এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।’

এতে বলা হয়, গত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ ক্রমশ কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের দিকে ঝুঁকেছে এবং কঠোরভাবে বিরোধীদের দমন করেছে। আবার অন্যদিকে বাংলাদেশ তার অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পুরো অঞ্চলে সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

তবে ব্যবসায়ীদের বিবৃতি নিয়ে করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চলমান থাকা উচিত। এটা ব্যাপকভাবে ব্যবসায়ীক উন্নয়নে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক সময়ের বেশির ভাগ প্রতিবেদনেই আগামীকালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে।

তবে ব্যাপক সহিংসতা, অনাস্থা এবং ক্ষমতাসীল ও বিরোধী দলের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ায় একটি শান্তিপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে অসহিংস, নির্ভীক এবং স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করে শান্তিপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে সব বাংলাদেশিকে স্বাধীন, স্বচ্ছ, সহনশীল এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আগামীকাল বাংলাদেশের এই নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন কি না, তা নির্ধারণ করতে ভোট দেবেন নাগরিকরা। তাই এই ভোটে জয়ী হলে তা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য বড় সাফল্য। বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে তুলে এনেছে শেখ হাসিনার সরকার। তবে তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে বলেও গার্ডিয়ানের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা করছেন, ১০ কোটি ভোটার সহিংসতাকে ঘৃণা করে দেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতি বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে যাওয়া এবং গত এক দশকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হওয়ার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবে।

এই প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগই এসেছে দেশের ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস খাত থেকে, যেখানে ৪৫ লাখ মানুষ কাজ করেন। এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের সুবিধা বাড়ায় গড় আয়ু ৭২ বছর হয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।

গার্ডিয়ানের খবরে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে শেখ হাসিনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াসহ বিরোধীপক্ষের অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন অথবা নিখোঁজ রয়েছেন। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ও মুক্তমত প্রকাশের সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে যে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকাজে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য ভিসা দিতে অপ্রয়োজনীয় সময় ক্ষ্যাপন করা হচ্ছে।

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো রোধে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরিসি) নির্দেশে মোবাইলের ইন্টারনেট সেবা থ্রি-জি ও ফোর-জি বন্ধ করার ঘটনাকেও গুরুত্ব দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট এবং ভুয়া পেজ বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক টুইটার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এগুলোতে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীকাল বাংলাদেশের ১১তম জাতীয় নির্বাচন, ব্যাপক সহিংসতার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আল জাজিরার আরও একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেন ইয়ার্স অব শেখ হাসিনা: ডেভেলপমেন্ট মাইনাস ডেমোক্রেসি।

ঢাকা থেকে এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক খবরে বলা হয়েছে, রোববারের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শেখ হাসিনা।

ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতোই অবস্থান নিয়েছে। সংস্থাটি এবার বাংলাদেশে কোন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। তবে এই নির্বাচন যেন সত্যিকারের বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির অভিযোগে কারাভোগ করছেন ঠিক সে সময়ই টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।