নেত্রকোনা শহরের রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন

নেত্রকোনা শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত মগড়া নদীর পাড়ের সাতাপাই কালিবাড়ি ও এর আশপাশের এলাকায় শহর রক্ষাবাধ ধসে পড়েছে।

ফলে সাতপাই কালিবাড়ি এলাকার পুরো রাস্তা চলে যাচ্ছে মগড়া নদীর গর্ভে। ঝুঁকিতে রয়েছে রাস্তার পাশের দোকান পাট ও ঘরবাড়িগুলো।

এদিকে রাস্তার এক পাশ নদীতে ধসে পড়ায় সড়কে চলাচলকারী সকল যানবাহন প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করে। উপরে পিলার দিয়ে সাধারণের চলাচলে করা হয় ফুটপাত। নিচে ভাঙন রোধে বসানো হয় ব্লক। এরপর আর কোন সংস্কার করা হয়নি। তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১৭ লাখ টাকায় কয়েক হাজার জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাঙ্গন ফেরানোর চেষ্টা করলেও এতে তেন কোন কাজ হয়নি। পাউবো দাবি তাদের হাতে এটি মেরামতে কোন বরাদ্দ নেই।

এলাকবাসী জানায়, গেল বছরে দফায় দফায় বন্যার ফলে অল্প অল্প করে ভেঙে পড়ে নেত্রকোনা শহরের সাতপাই শহর রক্ষা বাঁধ ও পৌরশহরের ফুটপাত। পরে পৌরসভার দায়িত্বে বাঁশ এবং বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করে রাখা হয় বেশ কিছুদিন। এরপর ভাঙনের তীব্রতায় প্রায় ১০০ মিটার বাধাই করা ব্লক ধ্বসে নদীতে চলে গেছে। এতে করে সড়কের পাশের তৈরী করা ফুটপাতের পিলারও ভেঙে পড়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে সাতপাই এলাকার বাসিন্ধাসহ পথচারী ও যানচলাচল। খবর পেয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ এলাকা পরিদর্শন করে বাঁশ দিয়ে টানা দিয়ে রেলিং বাঁচাতে চেষ্টা করে। দ্রুত পাউবো জিও ব্যাগ ফেলে ধস ফেরানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে পাড় ডেবে যাচ্ছে। এদিকে পুনরায় বর্ষা চলে আসলে পুরো এলাকা নদী গর্ভে চলে যাবার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি এই বাঁধের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

তিনি দ্রুত এটি মেরামতের তাগিদ দেন। পরে পাউবো এটি মেরামতে ৩ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠালেও তেমন কোন বরাদ্দ মেলেনি। তবে পাউবোর বক্তব্য- তারা ধীরে ধীরে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনকোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ব্যায়ের সবটা টাকা পেয়ে গেলে ব্লক নির্মাণের মাধ্যমে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হবে।

নেত্রকোনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র এস এম মহসীন আলম জানান, ১৯৭৮ সনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরী করা শহর রক্ষা বাঁধের দীর্ঘ এতো বছরেও আর কোন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ব্লকগুলো মাটিতে পরিণত হয়ে ধ্বসে গেছে। তবে এবছর ধসে যাওয়ার সাথে সাথে পৌরসভা পানি উন্নয়ন বোর্ড সমন্বয় করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ পরিদর্শন করেছেন। সেইসাথে সদরের নির্বাহী প্রকৌশলীও তদারকি করেছেন। কিন্তু এটির স্থায়ী ব্যবস্থা না হলে সড়ক এবং শহর ভেঙে নদী গর্ভে চলে যাবে। যে টাকা বরাদ্ধ এসেছে তা দিয়ে এই কাজ হবে না। তিন কোটির জায়গায় ৩০ লাখ টাকায় কি হবে।

সাতপাই কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আলপনা বেগম জানান, ১৭ লাখ টাকার জিও ব্যাগ ফেলেছে বললেও ঠিকাদার পাউবো খেলে দেয়ে হয়তো ১০ লাখ টাকা বাধে লেগেছে। এতে বাধটি রক্ষার জন্য কিছুই হয়নি। এখন থানার পাশেসহ আরও নতুন নতুন জায়গা ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এটি মেরামত না করা হলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ ক্ষতি আর পূরণ করা সম্ভব নয়। জেলায় কতশত কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। অথচ যেখানে একটা শহর হুমকির মুখে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে নাকি তাদের বরাদ্দ নেই। শহর ভেঙে বিলীন হলে আর কি ফেরত পাওয়া যাবে? কোন অজুহাত না দেখিয়ে দ্রুত এ বাঁধটি মেরামতের দাবি জানান তিনি।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান জানান, ভাঙনের সাথে সাথেই ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দ্রুত মেরামত করে বাঁধটি টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর সভা করে এটি মেরামতে ৩ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এসেছে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা। সম্পূর্ণ টাকা পেয়ে গেলে যে টুকু ভেঙে গেছে সেটা মেরামত করা যাবে। এছাড়া নদীর আমরা দাগ নির্ণয় করছি। উচ্ছেদ অভিযান করে নদী খনন ও সৌর্ন্দয্য বর্ধনের সময় পুরোটা করে দেয়া যাবে।