নৈসার্গিক লীলাভূমি রাঙ্গামাটির “বড়াদম” ভ্রমণ

রাঙ্গামাটি, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে যেন ঘুমিয়ে থাকে শান্ত জলের হ্রদ। সীমানার ওপাড়ে নীল আকাশ মিতালি করে হ্রদের সঙ্গে চুমু খায় পাহাড়ের বুকে। যেখানে হ্রদ আর সবুজ পাহাড়ের মিতালী, সেখানে বইছে ভ্রমণ পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমিদের সুবাতাস। একপাশে পাহাড় এবং আরেক পাশে সুবিশাল কাপ্তাই লেকের জলরাশি, যেন প্রকৃতির এক অদ্ভদ মিলবন্ধন। জায়গাটি রাঙ্গামাটির ভ্রমণ পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমিদের অত্যাধিক সুপরিচিত ও পছন্দের জায়গা। বলছি, রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই সংযোগ সড়কের মগবান ইউনিয়নস্থ “বড়াদমের” কথা। লেক ঘেঁষা ও পাহাড়ের সমারোহ এই স্থানটিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য পর্যায়ে। সবুজ প্রকৃতি আর সুবিশাল জলরাশির অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গাটি মুদ্ধ করে ভ্রমণ পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমিদের। পাহাড়ের উপর প্রান্তহীন রাস্তা দিয়ে গেলে মনে হবে এখানেই হারিয়ে যায়। বিকেল শেষে সূর্য যখন পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে লুকিয়ে পড়ে তা অদ্ভুদ বিমোহিত করে ঘুরতে আসা সকলকে।

ঢাকার অথবা চট্টগ্রাম হতে রাঙ্গামাটিগামী যে কোন বাস অথবা রিজার্ভ মাইক্রোবাস কিংবা অন্য কোন পরিবহনে চড়ে চলে আসতে পারেন রাঙ্গামাটির পুরাতন বাসস্টেশনে। সেখান থেকে ২৪ টাকায় আসামবস্তি বাজার এবং রাঙ্গামাটি আসামবস্তি বাজার থেকে ৫০০-৭০০ টাকায় সারা বিকেলের জন্য সিএনজি রিজার্ভ করে চলে আসতে পারেন অপরুপ সৌন্দর্য মন্ডিত এই জায়গায়। ভ্রমণে আকা-বাকা পথ, ৩-৪টি ব্রীজ, বাম পাশে কাপ্তাই লেক আর ডান পাশের ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় আপনাকে মুগ্ধ করবেই। রাস্তার পাশেই দেখতে পাবেন ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠিদের দোকান, তাদের লাগানো বিভিন্ন রকমের ফলগাছ এবং রাস্তার পাশেই অনেকে বসে বিক্রি করছে তাদের নিজের হাতের তৈরি পণ্য সামগ্রী ও পাহাড়ে ফলানো বিভিন্ন ফলম‚ল। বড়াদম পৌঁছালে একটি মন্দির দেখতে পাবেন। মনে হবে যেন স্বর্ণের তৈরি। এটি বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু শ্রদ্ধেয় বনভান্তের জন্ম স্মৃতিতে তৈরি। অন্য পাশে পানির মধ্যে একটি স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে পাবেন যেটি সাধনানন্দ মহাস্থবির ভনভান্তের জন্মস্থান। অবলোকন করতে পারেন প্রকৃতিতে ঘেরা জায়গাটিকে।

বড়াদমের কাছাকাছি আরো ২টি দেখার মতো পর্যটন স্পট রয়েছে। সেগুলো হলো বেড়ান্নে লেক শো ক্যাফেটেরিয়া ও বড়গাঙ রিসোর্ট। বেড়ান্যে ক্যাফেটেরিয়ায় কফি পান করতে করতে উপভোগ করতে পারবেন কাপ্তাই লেকের শান্ত শীতল সৌর্ন্দয। সেখানে পাহাড়ীদের তৈরি অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থাও আছে। আর ব্যাম্বু চিকেন, লেকের মাছসহ বিভিন্ন স্থানীয় খাবার যদি খেতে চান তাহলে চলে আসতে পারেন বড়গাঙ রিসোর্টে। সেখানে রাত্রী যাপন করার ব্যবস্থাও রয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা মহসিন কবির জানান, তিনি আগেও কয়েকবার রাঙ্গামাটিতে এসেছেন কিন্তু এই স্থান সর্ম্পকে কোন ধারণা না থাকায় আগে কখনো আসতে পারেন নি। পরিচিত এক বন্ধুর সুবাধেয় এই প্রথম এখানে আসা। তিনি বলেন, যদি আগে জানতাম এখানের পরিবেশটা এত মনোরম মুগ্ধকর থাহলে এখানেই সবার আগে আসতাম। নারায়গঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা সিয়াম জানান, আতœীয় থাকায় রাঙ্গামাটি প্রায়সই আসা হয় তার। এবং প্রতিবার রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসলে এখানে মাষ্ট একবার হলেও সে ঘুরতে আসে। সে বলে, যারা রাঙ্গামাটি এসে এখান ভ্রমণ না করেই চলে যায় তাদের রাঙ্গামাটি ভ্রমণ বৃথা। পর্যটকদের একবার হলেও এখানে ঘুরতে আসা উচিত। বরিশাল থেকে ঘুরতে আসা আব্দুল্লাহ জানায়, রাঙ্গামাটির বিভিন্ন স্থান ঘুরলেও এখানের মতো আনন্দ এবং পরিবেশ আর কোথাও পায়নি। লেক, পাহাড়, ক্ষুদ্র ন্-ৃগোষ্ঠিদের জীবন যাপনের জীবন্ত দৃশ্য কি নেয় এখানে। সবার একবার হলেও এখানে এসে প্রকৃতির লীলাভ‚মিকে প্রাণ খুলে উপভোগ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

পরিশেষে মনে রাখবেন পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। যথাযথ স্থানে ময়লা ফেলুন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের অনুভতিতে আঘাত হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। স্থানীয় মানুষদের সাথে শালীন আচরণ করুন।

ছবিতে..