নয় বছর পর বিদেশে সিরিজ জয় টাইগারদের

তামিম-মাহমুদউল্লাহর সৌজন্যে চ্যালেঞ্জিং স্কোর সত্বেও ক্রিস গেইল আর রভম্যান পাওয়েল টাইগার সমর্থকদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে ক্যারিবীয়ান দ্বীপে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে বাংলাদেশই। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে লাল সুবুজের জার্সিধারীরা।

এই জয়ের সুবাদে দীর্ঘ ৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে আবারও সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা। ২০০৯ সালের আগস্টে সর্বশেষ স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল লাল সবুজের দল। একই বছর জুলাই মাসেই দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ৩০২ রানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে নেমে সতর্ক সূচনা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই প্রান্তে মাশরাফি ও মেহেদী হাসান কিছুতেই ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারছিলনা সফরকারি দলকে। অবশেষে ১১তম ওভারের প্রথম বলেই টাইগারদের সাফল্য এনে দেন অধিনায়ক নিজেই। এই সিরিজে টানা তৃতীয়বারের মতো এভিন লুইসকে শিকার করেন মাশরাফি। মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই ক্যারিবীয় ওপেনার।

এরপর শাই হোপকে নিয়ে এগোতে থাকেন গেইল। একের পর এক চার-ছক্কায় এলোমেলো করে দেন বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ। একপর্যায়ে তুমুল চোখ রাঙাতে থাকেন ক্যারিবীয় দানব। তখনই বাদ সাধেন রুবেল। মিরাজের তালুবন্দি করে গেইলকে ফিরে যেতে বাধ্য করেন রিভার্সসুইং তারকা। ফেরার আগে টি-টোয়েন্টি মেজাজে ৬৬ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৩ রান করেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বিস্ফোরক ব্যাটার। এটি টি-টোয়েন্টি ফেরিওয়ালার ৪৯তম ওয়ানডে ফিফটি। ঝুলিতে রয়েছে ২৩টি সেঞ্চুরি।

পরে হেটমায়ারকে নিয়ে এগিয়ে যান হোপ। জমাট বেঁধে গিয়েছিল তাদের জুটি। দোর্দণ্ড প্রতাপে খেলছিল তারা। তাদের দম্ভ চূণর্ করেন মিরাজ। দুর্দান্ত কুইকারে বোল্ড করে গেল ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হেটমায়ারকে (৩০) সাজঘরের পথ দেখান তিনি। এতে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ। কিছুক্ষণ পরই যৌথ প্রচেষ্টায় কাইরনকে (৪) রানআউটে কেটে ক্যারিবীয়দের চেপে ধরেন মাশরাফি-মিরাজ। সেই চাপের মধ্যে হোপকে (৫৬) সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে ম্যাশ ফেরালে ধুঁকতে শুরু করে তারা।

একে একে ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান রোভম্যান। টাইগার বোলারদের ওপর রীতিমতো স্টিম রোলার চালাতে থাকেন তিনি। তবে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি হোল্ডার। মোস্তাফিজের শিকার হয়ে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। পরেও তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন রোভম্যান। এতে ভীতি সঞ্চারিত হয় বাংলাদেশ সমর্থকদের মনে। তিনি আউট না হলে হেরে যাওয়ার একটা শঙ্কা জাগে! তবে পারেননি ক্যারিবীয় হিটম্যান। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চ ছড়িয়ে হার মানতে বাধ্য হন।মাত্র ৪১ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেও পরাজিত সৈনিকে বেশে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। কারণ, নির্ধারিত ৫০ ওভারেও স্কোরবোর্ডে ২৮৩/৬ রানের বেশি তুলতে পারেননি তারা। বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফি ২টি এবং রুবেল, মিরাজ ও মোস্তাফিজ নেন ১টি করে উইকেট।

এর আগে শনিবার (২৮ জুলাই) সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাট করতে নেমে গায়ানার ধারাবাহিকতা টেনে আনেন তামিম ইকবাল। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে তামিম ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে অপরাজিত ছিলেন ১৩০ রানে। একই মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচেও ফিফটি পেয়েছিলেন।

আর তৃতীয় ওয়ানডে মাচে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারে ১১ তম সেঞ্চুরি। তামিম ইকবাল যে বদলে গেছেন সেটি যেন বারবার মনে করাচ্ছেন। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এখনও অবধি সবচেয়ে ধারাবাহিক তিনি। তামিমের সেঞ্চুরির দিনে বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩০১ রান পেতে ভুমিকা রেখেছেন মাহমুদউল্লাহ-মাশরাফি।

এদিন শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল দু’ওপেনার অনেক দূর যাবে। কিন্তু এনামুল উইকেটে থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ৩১ বলে ১০ করে ফিরেছেন হোল্ডারের বলে। বলা চলে, তিন ম্যাচে ব্যর্থ হয়ে হেলায় সুযোগ হারালেন এনামুল। পরের ম্যাচগুলোতে নিশ্চয় নির্বাচকরা এনামুলকে নিয়ে ভাববেন।

তবে দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন সাকিব আল হাসান। দুই বন্ধু মিলে যোগ করেন ৮১ রান। তামিম পরিণত ব্যাটিং করে চলেছেন অনেকদিন হলো। কিন্তু সাকিবের মধ্যে সেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দলীয় ১১৬ রানে সাকিব আউট হয়ে টানা তিন ফিফটি করার সুযোগ হাতছাড়া করলেন। ৪৪ বলে তিন চারের সাহায্যে ৩৭ রান করেন তিনি। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি সাকিব।

আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারেননি মুশফিকুর। এদিন তিনি ১২ রানের বেশি তুলতে পারলেন না। বাংলাদেশের স্কোরটা আরও বড় হতে পারত যদি তামিম সেঞ্চুরির পরপরই আউট না হতেন। ১২০ বলে তিন অঙ্কের ঘর স্পর্শ করেন তিনি। কিছুটা ক্লান্ত তামিম দেবেন্দ্র বিশুকে মারতে গিয়ে লেগ সাইডে সহজ ক্যাচ তুলে দিলেন। দারুন এক ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘটল ১০৩ রানেই। ১২৪ বলে খেলা তামিমের ইনিংসে ছিল সাতটি বাউন্ডারি আর দুটি ছক্কা।

এরপর সাব্বির রহমান বা মোসাদ্দেক হোসেনের আসার কথা থাকলেও সবাইকে অবাক করে অধিনায়ক মাশরাফি নিজেই এলেন ক্রিজে। তিনি যে রানের গতিটাকে বাড়ানোর জন্যই এসেছেন সেটা আর কারও বুঝতে বাকি রইল না। তা কাজটাও তিনি করে গেলেন। সবচেয়ে বেশি তোগ দাগলেন বিপক্ষ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের ওপর। আউট হওয়ার আগে মাশরাফি করে গেলেন ২৫ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩৬।

হাত খুলে খেলে ক্যারিয়ারে ১৯ তম ফিফটি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ অবধি তিনি ৪৯ বলে ৬৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। পাঁচ চারের বিপরীতে তিনি ছক্কা মেরেছেন তিনটি। মোসাদ্দেক ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। অবশ্য তাঁর আগে আউট হয়েছেন সাব্বির রহমান (১২)। অ্যাশলে নার্স ৫৩ ও হোল্ডার ৫৫ রানে পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।