পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড নবায়নে টাকা! ডিলারকে জরিমানা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির হতদরিদ্রদের নামে সরকারের দেয়া ১০টাকা কেজি চাল বিক্রয়ে কার্ড নবায়নের নামে টাকা ও চাল বিক্রয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের দায়ে বাদশা সুলায়মান নামের এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিলাইকুঠি বাজারে অভিযানকালে চাল বিক্রয়ের সময় উপকারভোগীদের নিকট হতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা অনুযায়ী জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা।

এ সময় ঘটনাস্থল হতে উপকারভোগীদের তালিকা ও আদায়কৃত ১১হাজার টাকা জব্দ করে সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের মাঝে আদায়কৃত অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে দায়িত্ব প্রদান করেন। বাদশা সুলায়মান দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে এই ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। তিনি কাটাপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিব উদ্দিন সরকারের পুত্র।

অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন, তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু ছায়েম মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান তারেক হোসেন, সচিব আলোপ্তগীন মুকুল, সাংবাদিক তরিকুল, গ্রাম পুলিশসহ উপকার ভোগীগণ।

জানা যায়, ২০১৬ সালে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর (ফেয়ারপ্রাইজ) আওতায় আনার জন্য ১০ টাকা কেজি দরে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল বিক্রি শুরু করেন বর্তমান সরকার। এ বছর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের কার্ড নবায়নের সিদ্ধান্ত নেন সরকার। কার্ড নবায়নের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অঃদাঃ) কর্মকর্তা জহুরুল হক উপজেলার ডিলারদের কার্ড সংগ্রহের নির্দেশ দেয়।

ডিলাররা ওই সুযোগে কার্ড নবায়নের নামে কার্ড প্রতি এক’শ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেন উপকারভোগীরা। তারা অভিযোগ করেন ডিলার বাদশা সুলায়মান পুরাতন কার্ড রেখে নবায়নের কথা বলে এক’শ টাকা নেন। তাই বাধ্য হয়েই টাকা দিচ্ছি। কার্ড নবায়নের নামে টাকা আদায় বন্ধের দাবী জানান ভুক্তভোগীরা। এ কর্মসুচীর আওতায় উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে ওই ডিলারের ৩১০ জন উপকারভোগী রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইউনিয়নের কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। শেখ হাসিনা সরকার আমাদের ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল কেনার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা এটা পেয়ে খেয়ে বেঁচে আছি। যেখানে ৩০ কেজি চাল কিনতে ৩শ টাকা জোগার করা কষ্টকর, সেখানে কার্ড নবায়নের নামে একশো টাকা দিতে বাধ্য করছে।

এ বিষয়ে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ডিলার বাদশা সুলায়মান কার্ড নবায়নে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার জহুরুল হকের নির্দেশে টাকা আদায় করেছি। টাকা আদায়ের নির্দেশ করে আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। মহামারী করোনা দূর্যোগের সময় আমি স্ব-উদ্যোগে এ ইউনিয়নের শতশত কর্মহীন, অসহায় মানুষের ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি। সেখানে হতদরিদ্রদের দেয়া এই টাকা আমি কিভাবে নিতে পারি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অঃদঃ) জহুরুল হক টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কার্ড নবায়নে কোন টাকা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। কোন ডিলার যদি টাকা আদায় করে থাকেন, সত্যতা সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় কোন উপকারভোগীর কাছ থেকে কার্ড নবায়নের নামে টাকা ও চাল বিক্রয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না।