পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১৩ কেজি ওজনের মুরগী দেখতে মানুষের কৌতুহল

শখের বশে ৮০ টাকা দরে কিনেছিলেন ১১ টি মুরগীর বাচ্চা। শান্ত স্বভাবের হালকা বাদামী রঙের তিন দিনের অতিথি নিয়ে বাড়িতে ফেরেন তিনি। অন্যসব মুরগীর মতোই স্বাভাবিক দেখভাল ও পরিচর্যা করছিলেন স্ত্রীর সহযোগীতায়। কিন্তু কে জানতো কয়েকমাস না যেতেই তিন দিনের বাচ্চা হয়ে উঠবে মস্তবড় ১৩ কেজি ওজনের মুরগী। আর এখন এক একটি মুরগী বিক্রি হচ্ছে কয়েক হাজার টাকায়। যা শুনতে গল্পকাহিনী মনে হলেও বাস্তবেই ঘটেছে এমন বিরল ঘটনা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউপির ফোরলেন সংলগ্ন মধ্য রজপাড়া গ্রামের মৃত মোতাহার হাওলাদারের পুত্র প্রান্তিক কৃষক আবুল কালাম হাওলাদার। তার গৃহে দেশী প্রজাতির কবুতর, হাঁস, মুরগী পালনের পাশাপাশি ব্রয়লার উৎপাদনেও বেশ পরিচিত এই কৃষক। এমনকি ক্ষেতকৃষির সঙ্গে এই ছোট্র খামারেই নির্ভরশীল তিনি। তবে মাস ছয়েক আগে পটুয়াখালীর একটি ফিট খাবার বিক্রির দোকানে গিয়ে ফুটফুটে বাদামী মুরগীর বাচ্চা দেখতে পান তিনি। সেখান থেকে সখের বসে ১১ টি তিন দিনের বাচ্চা কিনে তার ছোট খামারে সংযুক্ত করেন।

কয়েকমাস পড়েই বাচ্চাগুলোর বাড়তি গঠনে চক্ষু চরকগাছ হয় তার। বুজতে পারেন এই বাচ্চা কোন স্বাভাবিক জাতের মুরগী নয়। ৬ মাস অতিবাহিত হলে প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় ৮ থেকে ১৩ কেজির উপরে। এরই মধ্যে ডিম পারতে শুরু করে একটি মুরগী। তবে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি ডিম দেয়া মুরগীর সময়কাল। ১৩ কেজি ওজনের মোরগটির অত্যাচারে মত্যু হয় ডিম দেয়া রানীর। এদিকে দিনে প্রায় ৫শ গ্রাম খাবার প্রয়োজন হয়ে পড়ে তার গৃহে বেড়ে ওঠা বাড়তি গঠনের অতিথিদের। পরে সিদ্ধান্ত নেন বিক্রির। ইতোমধ্যে খামারে উচ্চমাংস বৃদ্ধির এই মোরগ এবং মুরগীর ১২টি বিক্রি করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে অর্থাভাবে ৮ কেজির একটি মোরগ হাটে নিয়ে এলে চোখ কপালে ওঠে উপস্থিত সকলের। মুহূর্তের মধ্যে মোরগটি এক নজর দেখতে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। পরে ৪শ টাকা দরে ৩২শ টাকায় মোরগটি বিক্রি করেন কৃষক কালাম। হাটে আসা স্কুল শিক্ষক মো. সোহেল বলেন, জীবনে এতো বড় মোরগ দেখিনি। যার ওজন ৮ কেজি। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়।

মাছ বিক্রেতা শানু মিয়া জানান, আমার টাকা থাকলে অবশ্যই মোরগটি কিনে নিতাম পরিবারকে দেখানোর জন্য। কৃষক আবুল কালাম বলেন, সখের বসে বাচ্চাগুলো কিনেছিলাম, লালন পালনে কোন সমস্যা নেই। দেশি মুরগির মতোই চাল, ধান, গম, ভাত এবং ফিট খাবার খায়। কিন্তু এখন টাকার অভাবে বিক্রি করছি। বাড়িতে আর একটি মাত্র ১০ কেজির মুরগী আছে। সেটিও বিক্রির পর বানিজ্যিক চিন্তা নিয়ে নতুন করে শুরু করবো।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা.সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, এটি আসলে টাইগারভ্যান প্রজাতির একটি জাত। সচারাচর এদের চাষ খুব কম হয়। তবে মাঝে মধ্যে এর বাচ্চা পাওয়া যায়। এই মোরগ,মুরগীর মাংস খেতে খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে এবং ওজনে অনেক বেশি হয়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশি মাংস উৎপাদনের এদের জন্যই চাষ করা হয়।