পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় ছেলের নামে মামলা দিলেন মা!

মাদ্রাসা শিক্ষিকা মায়ের বিরুদ্ধে পরকীয়ার তথ্য ফাঁস হওয়ায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কর্তৃক মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ করেছেন বগুড়ায় এক হতভাগ্য ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বগুড়া সদরের ফাঁপোড় মণ্ডলপাড়ার আব্দুল খালেকের পুত্র মো: সিহাব এই অভিযোগ করেন।

মাদ্রাসা শিক্ষিকার ওই ছেলে লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার মা বগুড়া সদরের কৈচড় সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষিকা সাফিয়া বেগম দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। ২০১০ সালে ঐ স্কুলের এক শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে আমার বাবাকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় বাবার ৪৭ শতাংশ জমি তার নামে লিখে দিলে তিনি সংসারে আসবেন বলে জানান। সংসার ও আমাকে বাঁচাতে তার দাবির প্রেক্ষিতে আমার বাবা ৪৭ শতাংশ জমি তার নামে লিখে দিয়ে সংসার বাঁচান।

সিহাব জানান, ২২ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন আমার বাবা। এরপর এসএসসি, এইচএসসি, বিএসসি, বিএড পর্যন্ত লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে এবং মাদ্রাসায় চাকরির বিষয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন তিনি। কাহালুর শীতলাই মাদ্রাসায় শিক্ষকতাকালে অন্য একজনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন আমার মা। সর্বশেষ ফেসবুকে পুলিশ সদস্য বিপি সোহেল নামে (০১৭৪৭৮৬৯৮৯৫) একজনের সঙ্গে বিভিন্ন ছবি ও কথোপকথন চ্যাটিং করতে দেখে জানতে চাইলে আমার মা রেগে যান। পরে আমি এ বিষয়ে বাবাকে না জানিয়ে মাকে ওই পথ থেকে সড়ে আসতে বলি। কিন্তু দিন দিন এ মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বিভিন্ন লোকজন তাদেরকে একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দেখেছে বলে জানালে আমি আমার মাকে আবারো সাবধান করি। কিন্তু গত ১৮ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে আমি আমার ঘরের কিছু জিনিস ভাঙচুর করি। আর এটাকেই পুঁজি করে আমার মা আমার বাবাকে ডিভোর্স দেবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। এসময় আমার বাবা কর্মসূত্রে কুষ্টিয়ায় ছিলেন। ঐ দিনই আমার অজান্তে আমার মা তার বাবা সামছুল হক, মামা নূর আলমকে সঙ্গে নিয়ে মার কাছে রাখা বাবার ষাট হাজার নগদ টাকাসহ প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে চলে যান। এসময় তিনি হুমকি-ধামকি ও মারপিটের অভিযোগ এনে আমি ও আমার বাবার নামে থানায় একটি জিডি করেন। যার নং-২৪৩০, তারিখ ৩১/০৮/১৭ ইং।

এই জিডির তদন্তে ছিলেন ছিলিমপুর ফাঁড়ির এসআই আবিদ। তদন্ত করার সময় বগুড়া ডিবি পুলিশের সদস্য আব্দুল মান্নান ওরফে নান্না নানাভাবে হস্তক্ষেপ করলে এসআই আবিদ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। অভিযুক্ত আমি ও আমার বাবা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে কোনো সত্যতা না পেয়ে চলে যান তিনি। পরে মীমাংসার পর্যায় না থাকায় তখন আমার বাবা জেলা বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি চুরির মামলা দায়ের করেন। যার নং-১৭০১ সি/১৭ (সদর)। যা তুলে না নিলে আমার বাবা, আমার আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ধর্ষণসহ মামলার পর মামলা দেয়া হবে বলে হুমকি ধামকি দেয়া হয়। সেই সূত্র ধরেই বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মোকদ্দমা নং-২৮০ পি/ ১৭ (সদর)-এ গত ১৩ নভেম্বর আমার মা বাদি হয়ে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরো বলেন, ওইসব কুচক্রী মহলের হুমকি-ধামকিতে নিরাপত্তার অভাবে দীর্ঘ দিন আমার বাবা গ্রামে আসতে পারছেন না। ঘটনার পর তার মামা নূর আলম আমাকে আর আমার বাবাকে ধরার জন্য বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে গ্রামে পাঠিয়েছিলেন। তাদের এই অপতৎপরতায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আর এসব মামলায় পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও মদদ দিচ্ছে পুলিশ সদস্য বিপি সোহেল। সম্ভবত সে বগুড়াতেই কর্মরত। সংসার ভাঙার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার ঘটনায় পুলিশের আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে আমার মা মাদ্রাসা শিক্ষিকার নৈতিক অবক্ষয় ও বেপরোয়া চলাফেরা, সন্তানকে দূরে ফেলে দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দেয়া এবং শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে কলঙ্কিত করার অপরাধে জেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তার চাকরিচ্যুতির দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করায় বগুড়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পুলিশ প্রশাসনসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে পুলিশ সদস্য সোহেলের মোবাইলে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আর শিহাবের মা মাদ্রাসা শিক্ষিকা সাফিয়া বেগমের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।