পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা: সেই অমির অফিসে মিললো শতাধিক পাসপোর্ট

চিত্রনায়িকা পরীমনির করা ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমির দুটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে একটি এজেন্সি থেকে ১০২টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। সেখান থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে এই অভিযান চালানো হয়। সাভার ও দক্ষিণখান থানা-পুলিশ যৌথভাবে এই অভিযান চালায়।

পরে এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় মামলা করা হয়। মামলায় অমিসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণখান থানার অসি শামীম হোসেন।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানের সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামের অমির একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়া উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় আরেকটি ট্রাভেল এজেন্সিতে পুলিশ অভিযান চালায়।

পুলিশ জানায়, সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ১০২টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। সেখান থেকেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার ট্রাভেল এজেন্সিতে অভিযান চালিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—বাছির ও মশিউর।

এই ঘটনায় সাভার থানা-পুলিশ বাদী হয়ে অমি, বাছির, মশিউরসহ পাঁচজনকে আসামি করে পাসপোর্ট আইনে মামলা করেছে।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, জব্দ করা পাসপোর্টগুলো বিভিন্ন নারী-পুরুষের।
তারা কারা, তাদের পাসপোর্ট রিক্রুটিং এজেন্সিতে বৈধ নাকি অবৈধভাবে রাখা হয়েছে—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সির বৈধ লাইসেন্স আছে কি না, তাও দেখা হচ্ছে।

পরীমনির করা মামলার আসামিদের মধ্যে দুজন—নাসির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গত সোমবার গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ইয়াবা ও মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় করা মামলায় নাসির ও অমির সাত দিনের রিমান্ড এবং গ্রেফতার তিন নারীকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আইনশৃংখলা বাহিনী জানিয়েছে, নায়িকা পরীমনিকে ফাঁদে ফেলতে অমিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গ্রেফতার হওয়ার পর অমিকে নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

ক্লাবপাড়ায় অমিও একজন পরিচিত মুখ। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন এক সময় বিদেশে ছোটখাটো চাকরি করতেন। এরপর দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেন।

তবে সংসারে ভাগ্য ফিরে যখন ছেলে অমি আশকোনায় তাদের সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। এখান থেকেই ১০২ টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে নারী পাচার করেই প্রচুর অর্থ কামান তারা। বিত্তশালী ও তাদের বখে যাওয়া সন্তানদের বিপথে নিতে অমির জুড়ি নেই। ঢাকার উত্তরা ও আশকোনায় তাদের একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। ওই এলাকায় এক নামে তাকে সবাই চেনেন।

শত শত কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন অমি। বিদেশে কর্মী পাঠানোর সূত্র ধরে সাবেক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে অমির পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। অমিদের একাধিক আলিশান বাড়িতে রয়েছে সুইমিংপুলও। তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সেখানে অনেক সম্পদ গড়েছেন। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমও গড়েছেন অমি। দক্ষিণখানে একটি রিসোর্টের আড়ালে প্রায় প্রতিদিন মদ-জুয়ার আসর বসাতেন তিনি। ওই রিসোর্ট তার ‘রঙশালা’ নামে পরিচিত।

সূত্রে আরও জানা গেছে, নাসির ও অমির সিন্ডিকেট আগেও অনেক নারীর ওপর একই ধরনের নিপীড়ন চালিয়েছে। তবে নানা ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ রাখা হয়। এবারও তাদের বিশ্বাস ছিল, পরীমনির ঘটনা তারা ধামাচাপা দিতে পারবেন।অবশেষে পরীমনিকাণ্ডে তাদের দীর্ঘদিনের কুকর্ম সামনে এলো।

প্রসঙ্গত, ৯ জুন মধ্যরাতে সাভারে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ঘটনার চার দিন পর রোববার রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এবং রাত ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনা প্রকাশ করেন নায়িকা পরীমনি।

সোমবার সকালে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন তিনি।

ওই দিনই প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মাদক ও ইয়াবা জব্দ করা হয়।