পাঁচ দিনে নাফ নদীতে ৫৫ রোহিঙ্গার লাশ

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসার পথে নৌকা ডুবিতে গত পাঁচ দিনে কক্সবাজারের নাফ নদী থেকে নারী ও শিশুসহ ৫৫ রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সর্বশেষ রোববার নাফ নদী থেকে আরও এক রোহিঙ্গা শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিকাল ৩টার দিকে নাফ নদীর টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী পয়েন্ট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে টেকনাফ থানার ওসি মো. মাইনউদ্দিন খান।

এর আগে শনিবার সকালে নাফ নদীর টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট থেকে উদ্ধার করা হয় এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ। পরে শনিবার রাতে টেকনাফে নাফ নদীর হোয়াইক্যং পয়েন্ট থেকে ২ নারীর এবং মধ্যরাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী পয়েন্ট থেকে গুলিবিদ্ধ এক রোহিঙ্গা দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল।

এছাড়া বুধবার ৪ জন, বৃহস্পতিবার ১৯ জন, শুক্রবার ২৬ জন ও শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ৫ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওসি মাইনউদ্দিন বলেন, টেকনাফে হোয়াইক্যং ইউনিয়নে নাফ নদীর খারাংখালী পয়েন্টে একটি মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।

তিনি বলেন, “শিশুটির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার আনুমানিক বয়স ৫/৬ বছর ।”

মৃতদেহটি দাফনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।

গত সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ ফাঁড়ি ও একটি সেনাঘাঁটিতে সমন্বিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং বাকি ৫৯ জন ‘রোহিঙ্গা মুসলিম বিদ্রোহী’ বলে দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে।

ওই ঘটনার পর ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এরআগে গত বছরের অক্টোবরে সীমান্তরক্ষীদের চৌকিতে হামলার পর রাখাইনদের গ্রামে-গ্রামে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। এ সময় নির্বিচারে রোহিঙ্গা হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয় বলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠে।

সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে গত বছর। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা।

এছাড়াও গত কয়েক দশকে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি সরকারের। তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ।