পাকিস্তানের এমন আত্মসমর্পন আগে একবারই!

সেই বেচারা তরুণটার জন্য এখন মায়াই হচ্ছে। বিত্ত-বৈভবের মোহ ছেড়ে যিনি সন্যাস নিতে গিয়েছিলেন। শান দেওয়া ক্ষুরের নিচে মাথা পেতেও দিয়েছিলেন, ন্যাড়া হবেন বলে। হঠাৎ চোখ গেল হাওয়ায় পাতা উল্টে যাওয়া পত্রিকায়। আরেহ, ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ যে আছে। ফিরে এল সব মোহ। প্যাগোডা থেকে পালালেন।

সব বেকার!

স্টার স্পোর্টসের এত ঢাকঢোল পিটিয়ে বানানো বিজ্ঞাপন যে ম্যাচের জন্য, খোদ আইসিসি যে ম্যাচটি থালায় সাজিয়ে দেয়; তা যে এমন স্বাদহীন হবে—কে জানত! ১৩৬ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচটা পাকিস্তান হারল ১২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। দুই দলের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাসে ১০০-র বেশি রানের ব্যবধানে পাকিস্তান একবারই হেরেছিল এর আগে। ২০০৮ সালে ঢাকার সেই পরাজয়টির সঙ্গে যুক্ত হলো এমন আরও একটি বড় পরাজয়।

কয়েক দফা বৃষ্টির হানায় ৪৮ ওভারে ৩ উইকেটে ৩১৯ রান তুলেছিল ভারত। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে পাকিস্তানের নতুন লক্ষ্য ঠিক হয়েছিল ৪১ ওভারে ২৮৯ রান। পাকিস্তানের ইনিংস আর বৃষ্টি এল না। বরং ঝকঝকে রোদ। কিন্তু ততক্ষণে পাকিস্তানি কামানের সব গোলাবারুদ যে ভিজে স্যাঁতসেঁতে!

৫০ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪তম ওভারেই অলআউট পাকিস্তান। বোলিংয়ের সময় চোট পাওয়া ওয়াহাব রিয়াজ ব্যাট হাতে নামলেন না। পাকিস্তান যে আসলে ম্যাচ হেরে গেছে আরও অনেক আগে। রিয়াজ নামলেও তাতে হেরফের তেমন হতো না।

৫০-এর ইনিংসটা টেনে নিয়ে যেতে পারেননি আজহার আলী। ফিফটি করে আউট হয়েছেন ঠিক পঞ্চাশে। বাকিরা সেট হয়েও ইনিংসটাকে লম্বা আকার দিতে পারেননি। আস্কিং রান রেটের চাপে পড়ে উইকেট দিতে বাধ্য হয়েছেন। মোহাম্মদ হাফিজ পাস নম্বরেই (৩৩) তৃপ্ত হলেন। এ দুজন ছাড়া বাকি সবাই ফেল। আর কেউ ২০ রানই করতে পারেননি। অথচ আরও চার ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। সেট হয়েও ইনিংসটা টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না কেউ।

উমেশ যাদব ৩ উইকেট নিলেও ভারতের বোলারদের মধ্যে একক কোনো নায়ক নেই। ৩২ বলে ৫৩ করে যুবরাজ সিং-ই তাই ম্যাচ সেরা। যদিও রোহিত শর্মা (১১৯ বলে ৯১), শিখর ধাওয়ান (৬৫ বলে ৬৮), বিরাট কোহলিদের (৬৮ বলে ৮১ রানে অপরাজিত) অবদান রানের সংখ্যায় বেশি। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা আসলে পাওনা ছিল রবীন্দ্র জাদেজার।

দিনের শুরুটা হয়েছিল তাঁকে ঘিরে চমক দিয়েই। রবিচন্দ্রন অশ্বিন নেই, আছেন জাদেজা! অশ্বিনকে রেখে তাঁকে একাদশে নেওয়ার যৌক্তিকতা বুঝিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। পাকিস্তানের প্রথম পাঁচ উইকেটের চারটিতেই জড়িয়ে তাঁর নাম।

পাকিস্তানের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান এসেছে যে দুজনের ব্যাটে (আজহার-হাফিজ), দুজনই তাঁর শিকার। বাবর আজমের ক্যাচ ধরেছেন। দুর্দান্ত রান আউটে ফিরিয়েছেন দুই চার ও এক ছক্কা দিয়ে রানের খাতা খোলা শোয়েব মালিককেও। ১৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচটা ওখানেই শেষ পাকিস্তানের জন্য।

এরপর ধুঁকতে ধুঁকতে আরও ওভার সাতেক ব্যাটিং করা। ততক্ষণে এই উপলব্ধিও হয়ে যাওয়া, কেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটিকে খোদ কোহলিরাই আর বেশি উত্তেজনার রং মেশাতে চান না।

ঝকমকে প্যাকেটে স্বাদহীন খাবারের বিজ্ঞাপন করেই বা কী লাভ!