পাবনার চাটমোহরে মাঘের শীতে চলছে বাউৎ উৎসব

এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য। এখন মাঘ মাস কনকনে শীত আর হালকা কুয়াশা চারিদিকে। কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো ফুটছে। কুয়াশা কাটতে না কাটতেই জীবন জীবিকার তাগিদে বিলের দিকে ছুটছেন মানুষ। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য সবার কাঁধে মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে ছুটছে বাউৎ (মাছ ধরা) উৎসবে।

রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল কাটানদীতে চলে মাছ ধরার উৎসব। পলো ও বিভিন্ন প্রকার জাল নিয়ে অসংখ্য সৌখিন মৎস্য শিকারী ছেলে-বুড়ো মেতেছেন এই উৎসবে।

মাছ ধরার এই উৎসবের নাম বাউৎ উৎসব। আদিযুগ ধরে চলে আসছে চলনবিলে এই বাউৎ উৎসবের রেওয়াজ। বিলের পানি কমে গেলে এই পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়ে থাকে। বাউৎ উৎসবে ধনী-গরীবের ভেদাভেদ নেই এখন। যার পলো আছে সেই নামতে পারে শিকারে। মাছ ধরতে বিলে নেমেছে অসংখ্য মানুষ। হৈচৈ আর চেচামেচিতে আনন্দমুখর চারপাশ। বাউৎ উৎসবে পাবনার আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ চলনবিলের আশ-পাশের জেলাগুলো থেকে শত শত মানুষ অংশ নিয়েছে।

আটঘরিয়ার চঁাদভা থেকে বিলে মাছ ধরতে আসা মো. খোরশেদ আলম (৬০) সাথে কথা হয়। সে বলেন, প্রতিবছর এই মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বিলে মাছ ধরতে আসি, আজ এসেছি হান্ডিয়াল কাটানদীতে মাছ ধরতে। পলো দিয়ে মাছ ধরা আমার দীর্ঘদিনের পেশা। আমি যখন প্রবাসে ছিলাম তখন এই বাউৎ (মাছ ধরা) উৎসব অনেক মিস করি। দেশে ফিরে এসেই চলে এসেছি এই মাছধরা উৎসবে। এর আনন্দই আলাদা। কাকডাকা ভোরে রুটি আর ভাজি নিয়ে এসেছি এই উৎসবে, এর আনন্দই আলাদা। তবে আগেকার তুলনায় দেশীয় প্রজাতির মাছ কমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বিলে মাছ ধরতে আসা ব্যক্তিরা বলেন, বর্ষা মৌসুমে চায়না জালসহ বিভিন্ন অবৈধ জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় খালে বিলে এখন মাছ কমে গেছে। তাই এখন আর তেমন মাছ নেই এই বিলে।

ঈশ্বরদীর মূলাডুলি থেকে আসা মশিউর রহমান নামে এক সৌখিন মাছ শিকারির সাথে কথা হলে তিনি জানান, শখ করে মাছ ধরতে এসেছি আমরা, মাছ পাই আর না পাই বাউৎ উৎসবে মাছ ধরা আমাদের অন্যতম শখ।