পাবনার সুজানগরে গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও পোস্টম্যান বকুল!

পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নে স্থানীয় পোস্টম্যান ও পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবী, পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে প্রায় ৩ কেটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল।

ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযুক্তরা টাকা আমানত নিয়ে গ্রাহকদের পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নগদ এর নামে টোকেন দিয়েছেন। তাঁরা গ্রাহকদের বলেছিলেন, নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি। এ জন্য সরকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেওয়ার জন্য পোস্ট অফিসের পাশাপাশি আর একটি সংস্থা চালু করেছেন, নাম “নগদ”।

ভুক্তভোগী খালেক ফকির, বুলু খাতুন, আলেয়া খাতুনরা অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের একেক জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ১ লাখে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে লাভ দেওয়ার কথা বলে টাকা জমা নেওয়া হয়। পোস্টম্যান বকুলের কথা শুনে তাঁরা টাকা দেন। তিনি টাকা নেওয়ার টোকেনও দিয়েছেন। টোকেনে লেখা আছে, পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নগদ রেজি: নম্বর-সি-৫৩৬৭৭ (৩৪২) ২০০৪। পরে ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন যে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাগরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে গেলে পাবনার ডেপুটি পোস্ট মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে অন্যত্র বদলী করেন।

সাগরকান্দিতে আসা নতুন পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, পোস্টম্যান নূর হোসেন বকুল কোথায় আছে জানেন না। টাকা নেওয়ার বই বিষয়ে তিনি জানান, এসব বই ডাক বিভাগের না। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বকুলের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরীর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। গ্রাহকদের সব টাকা তাঁরা পরিশোধ করে দেবেন।
আর পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দাবী করেন, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রওশন আলী বলেন, তিনি বিষয়টি কয়েকজন ভুক্তভোগীর মাধ্যমে জেনেছেন। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

পাবনার ডেপুটি পোস্ট মাস্টার আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের একজন পোস্টম্যান লাখে ১ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নগদ এর মতো করে বই তৈরি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। পোস্ট অফিসের সঙ্গে কুরিয়ারের এ ধরনের কোনো সম্পর্ক নেই। বইতে নগদের লোগো দিয়েছে। মূলত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’

আনোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনো ভুক্তভোগীরা কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি বলে জানান।