পাবনায় ঘুষ না পেয়ে সহকারী শিক্ষককে পেটালেন প্রধান শিক্ষক

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় উৎকোচের (ঘুষ) টাকা না পেয়ে দহপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম (বিএসসি)কে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছেন ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান।

রবিবার (১৯ জুন) সকালে বেলা আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মন্ডতোষ ইউনিয়েনের দহপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিদ্যালয় এলাকা জুড়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় দুই মাস পূর্বে সহকারী শিক্ষকদের টাইমস্কেলের রেজুলেশনের জন্য দহপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করেন। এরপর প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অফিস খরচ বাবদ জনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ দাবী করেন। কিন্তু সহকারী শিক্ষকগণ প্রধান শিক্ষকের ওই অনৈতিক দাবী পুরণ না করায় প্রধান শিক্ষক টাইমস্কেলের ফাইলের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। প্রায় দু’মাস অতিবাহিত হলে গত রবিবার সকালে বিএসসি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে তার কারণ জানতে চান। তখন প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ফজলুর রহমান বলেন, অফিস খরচ হিসেবে দুই হাজার টাকা করে চেয়েছিলাম কেউ দেয়নি তাই স্বাক্ষর করা হয়নি। তবে এখন যদি পনেরশো টাকা করে সবাই দেয় তাহলে স্বাক্ষর করে দেব। তখন শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কোন উৎকোচ (ঘুষ) দিতে পারবো না। টাইমস্কেল আমাদের অধিকার। আপনি কেন তা আমাদের দিবেন না। এমন অবস্থায় এক সময় তারা দুজনেই বাক-বিতন্ডতায় জড়িয়ে পড়েন। এর এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ফজলূর রহমান উত্তেজিত হয়ে কাঠের চেয়ার দিয়ে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের মাথায় আঘাত করলে রফিকুলের কপাল কেটে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেন, তাদের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) উগ্র এবং বদ মেজাজী তাই তিনি মাঝে মাঝেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। প্রধান শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা সবাই কিছু বলতে পারি না।

সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ফজলুর রহমান ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দহপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দান করেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ অবৈধ দাবী করে সে সময় বিদ্যালয় কমিটি থেকে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করে যা এখন পর্যন্ত চলমান আছে।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ফজলুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে তার কথা বলার মানুষিকতা নেই। বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলবেন।
এ ব্যপারে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির নব্য সভাপতি মো. জাকির হোসেন ছবি প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের এমন জঘন্য আচরণে তিনি মর্মাহত উল্লেখ করে বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সকলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ফোনে বিষয়টি শুনেছি।