পাবনায় পদ্মা-যমুনার পানি বৃদ্ধি: তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, বাড়িঘরে পানি

পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নদী পাড়ের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি নদী পাড়ের বেশকিছু গ্রামে বাড়ি ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে, পাবনায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তথ্য অনুযায়ী পাবনায় যমুনা ও বড়াল নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা নদীর পানি।
পাবনা পানি উন্নয় বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে পানির স্রোতের কারণে নদ নদীর পানি বাড়ছে।

যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, বড়াল নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।

এদিকে, পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও জেলার সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশ কিছু এলাকায় বাড়ি ঘরেও পানি ঢুকেছে।

সোমবার সদর উপজেলার ঘোষপুর, চর শিবরামপুর, ভবানীপুর এবং ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকার কলা, পটল, মূলা, মরিচ, গাঁজর, করলাসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

চর ঘোষপুর গ্রামের গৃহিনী জ্যোৎস্না বেগম বলেন, “আমি চার বিঘা সবজি চাষ করেছি, পুরো সবজির ক্ষেত পানির নিচে চলে গেছে। গত ১০ দিন আগে ক্ষেতে পানি ঢুকেছে, শুক্রবার বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলায় সাঁড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়া পশ্চিমপাড়ায় বেশকিছু বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের চর কামালপুর, বিলকাদা, চরকুড়–লিয়া এলাকায় ফসলি জমিতে পানি প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এমদাদুল হক রানা সরদার জানান, নদীতে জেগে উঠা বিলবামনী মৌজার চরে প্রায় ১শত ২৫টি পরিবার বসবাস করতো। এই চর ডুবে যাওয়ায় পরিবার গুলো পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বিশুদ্ধ পানির অভাব ও চুলা জালিয়ে রান্না করতে না পারায় এবং গোচারণ ভুমি পানিতে তলিয়ে গেলে পানিবন্দী পরিবারগুলো নিরুপায় হয়ে গবাদি পশু নিয়ে নৌকায় করে নদীর এপারে চলে এসেছে। এছাড়া সাড়াঘাটে কয়েকটি দোকান ও প্রায় ১০টি বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ জানান, গত তিন দিনে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা, সাঁড়া, পাকশী ও সাহাপুর ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করায় ২৫৫ হেক্টর জমির মূলা, মিষ্টি কুমড়া, করলাসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি, ৩৫ হেক্টর মাসকালাই, ৩৪ হেক্টর আখ ও ২ শত হেক্টর জমির কলার ক্ষতি হয়েছে।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, গত এক সপ্তাহে চর এলাকায় ৮০০ হেক্টরেরও বেশি ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চর এলাকার মানুষ বেশিরভাগই শাকসবজি এবং কলা চাষ করে। বন্যার পানির কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৩১ হেক্টর সবজি এবং ২৮০ হেক্টর কলা ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। কিছু কিছু আমন ধানের জমিতে পানি ঢুকেছে। আমরা পানি বৃদ্ধির গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছি। পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে উজান থেকে আসা ঢলের কারণে আগামী কয়েকদিনে পাবনায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।