পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম : দেখার কেউ নেই

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা শিক্ষা অফিস অনিয়মের এক স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নিয়মিত মাসোয়ারা পেলে যে রকম পরিদর্শন হয় ঠিক সেরকমই দায়সারা পরিদর্শনে অনিয়মটাই এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের কাজ চলমান থাকলে সেখানে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ না দেওয়ার বিধান রয়েছে। ভুলক্রমে এ রকম দু’একটি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ আসলে তা বিবেচনায় নেওয়ারও কথা রয়েছে। তবে মঠবাড়িয়া উপজেলা ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ আসা ২৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সবগুলোই নতুন ভবন। এরমধ্যে অধিকাংশই রয়েছে নির্মাণাধীন ভবন।এছাড়া যেসব বিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি ও এডহক কমিটি কোনটিই নেই সেসব বিদ্যালয়েও দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ। যদিও কমিটি ছাড়া বরাদ্দ ব্যয় করার কোন নিয়ম নেই।

অন্যান্য অনিয়মের সাথে এখন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেপুটেশন বানিজ্য। ৭৬ নং বেতমোর রাজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহাফুজা আক্তার ও ১৯৮ নং বাদুরতলী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রমেন্দ্র বাবুকে মনগড়া নিয়মে ডেডুটেশন বদলি দেওয়া হয়েছে। এভাবে অর্ধ শতাধিক সহকারি শিক্ষককে ডেপুটেশনে বদলি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৭০ নং দক্ষিণ সোনাখালী সরকারি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে ২ লাখ টাকা মেরামতের বরাদ্দ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিল ভাউচার জমা দেওয়ার ৬ মাস পরেও বরাদ্দের বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি বিদ্যালয়টির সভাপতি সীমা রানী। সাংবাদিকদের কাছে বরাদ্দের বিষয়ে অবগত হয়ে বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে বরাদ্দের বিষয়ে নিশ্চিত হন তিনি। বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গেলে ক্লাসে যাওয়ার ব্যস্ততা দেখান প্রধান শিক্ষক মুক্তি রানী।একটু সময় অফিসে বসলেও ক্ষুদ্র মেরামত কাজে তথ্য চাইতেই অনেকটা উত্তেজিত হয়ে উঠেন তিনি।ক্লাসের কথা বলেই অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়েন এই প্রধান শিক্ষক। ২ লাখ টাকা (ভ্যাট সহ) দিয়ে কয়েকটি গ্রীল ছাড়া আর কোন দৃশ্যমান কাজ চোখে পড়েনি।শিক্ষা অফিস ম্যানেজ করে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করলেও বরাদ্দ ব্যয় করার হিসাব দিতে হয়নি কাউকেই।এ বিষয়ে কোন বক্তব্যও দিতে চান না তিনি।

৬৫ নং সূর্যমনি নেছারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি নেই ১৩ বছর ধরে।বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তারের (ডলি) বাবার বাড়ির সামনে।পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি করতে না পেরে কোন অনুমোদন ছাড়াই মনগড়া নিয়মে এডহক কমিটি দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করেন তিনি। স্লিপের ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ৪২ হাজার টাকার ফার্নিচার কিনেছেন তিনি।আর নতুন ভবনের অফিস কক্ষে রং করেছেন নিজের টাকা দিয়ে। তবে ২ লাখ টাকার কাজ সন্তোষজনক দৃশ্যমান দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার। তিনি বলেন,শতভাগ কাজ করেছি কোন অনিয়ম হয়নি।

১৮ নং পূর্ব ফুলঝুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম শ্রমিকের পরিবর্তে নিজেই করেছেন ২ লাখ টাকার মেরামতের কাজ।কাজ শুরু করার আগেই ম্যানেজিং কমিটির মিটিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।জমিদাতা সদস্য নিজেই বরাদ্দের কথা জানতে পারেন সাংবাদিকদের কাছে। ক্ষুদ্র মেরামতে নয় ছয় করার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক বলেন,বিদ্যালয়ে যখন বরাদ্দ আসতো না তখনই আমরা ভাল ছিলাম।তবে সন্তোষজনক কোন কাজ দেখাতে পারেননি তিনি।

৯৭ নং দক্ষিণ সাপলেজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি এবং এডহক কমিটি নেই ৭ বছর ধরে।কোন কমিটি ছাড়াই বিদ্যালয়টিতে ব্যয় করা হয়েছে ২ লাখ টাকা (ভ্যাট)।কমিটি না থাকায় শিক্ষা অফিসের যোগসাজশে মনগড়া বিল ভাউচার তৈরি করেন প্রধান শিক্ষক।৮৮ নং উত্তর সোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ও এডহক কমিটি ছাড়াই ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ ব্যয় করা হয়েছে।

এছাড়াও ১৪২ নং উত্তর রাজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,১৭১ নং হাজারকুড়া সেনের টিকিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৯ নং দক্ষিণ বড় মাছুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ব্যাপক অনিয়ম থাকলেও অজ্ঞাত করানে কোন ব্যবস্থা নেননা উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন।

নিয়মিত ও এডহক কমিটিবিহীন বিদ্যালয়ে এবং নির্মাণাধীন বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল কাইয়ূম জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।