‘পুলিশ ধরলে আঠারো ঘা- এ প্রবাদ মিথ্যা প্রমাণ করতে হবে’

জঙ্গিবাদের মতো মাদক নির্মূলেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বহু মেধাবী শিক্ষার্থী মাদকের কবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বহু পরিবার ভেঙে যাচ্ছে।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বজুড়ে যখন মন্দা চলছিল, বাংলাদেশে তখন ৭.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ‘মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এবার আমরা ৫.৮৩-এ এনেছি। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা মানুষের জীবনমান উন্নত করার সুযোগ দিয়েছি। বেতন বাড়িয়েছি। কিন্তু বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি দিচ্ছি। এভাবে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে মনোযোগী করার চেষ্টা করছি।’

এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদকের ছোবল থেকে তারা যেন দূরে থাকে, সরকার সেই চেষ্টাই করছে। এক্ষেত্রে কারা মাদকের ব্যবসা করে, কারা এই চক্রে সম্পৃক্ত এসব খুঁজে বের করতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশ থেকে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদ যে সমাজের জন্য ক্ষতিকর তা বোঝানোর মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির ফলেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব হয়েছে। এখন সাধারণ মানুষই নিজ থেকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে তথ্য দিচ্ছে।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ যেখানে বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেখানে ছোটবড় নানা ঘটনা ঘটে চলেছে, সেখানে বাংলাদেশ জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। এটা অনেক বড় একটি বিষয়।

‘বিএনপি জামাত জোট এসেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে গেছে। জঙ্গিবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সেখানে বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই, কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদ দমনে আপনারা কাজ করে যাচ্ছেন।’

পরিকল্পিত কাজ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কাজ এককভাবে করা যায় না। তথ্য আদানপ্রদান করে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা গেলে হতাহত কম হবে। কাজে সফলতা বেশি আসবে।

এ উদ্দেশ্যে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে সব গোয়েন্দা সংস্থা মিলিয়ে একটি টিম করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্নভাবে কাজ করে। তাই যে কোনো তথ্য পেলে অন্য সংস্থার সাথে শেয়ার করে পরিকল্পিতভাবে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

হলি আর্টিজানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনা রোজার মধ্যে ঘটেছিল। ওই সময় গণভবনে বসে সবাই মিলে আমরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করি কীভাবে কোন অপারেশন পরিচালনা করা হবে।’

সবাই মিলে পরিকল্পনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণেই অভিযান এতটা সফল হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পুলিশ বাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, কখনো গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পেলে তা অন্যান্য বাহিনীর সাথে বিনিময় করে কাজ করতে হবে। ‘অনেকেই ক্রেডিট নিতে একা একা কাজ করতে যেয়ে শেষে নিজেই জীবন দিতে হয়। এটা ঠিক না। এক্ষেত্রে কাজের ঝুঁকির কথাটাও চিন্তা করতে হবে। এখানে একা ক্রেডিট নেয়াটা ব্যাপার না। সবাই সম্মিলিতভাবে আমরা কাজ করব। তাহলেই আমরা বেশি সাফল্য পাবো।’

‘মানুষ পুড়িয়ে মারা রাজনীতি নয়’
হরতাল-বিক্ষোভের সময় যানবাহনে আগুন লাগানো ও হতাহতের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য মানুষ পুড়িয়ে মারা – এটা কেমন রাজনীতি আমি জানি না। আমরা সেই ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করে আসছি। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতি করে আসছি আমি। আমরা রাস্তা বানাই, তারা রাস্তা কেটে দেয়। আমরা গাছ লাগাই, গাছ কেটে দেয়। আমরা নতুন রেলগাড়ি, বাস নামাই, তারা সেসব পুড়িয়ে দেয়। এসব কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। এটা কোনো রাজনীতি না। আমরা এ ধরনের কোনো কাজ বরদাস্ত করব না। এখানে পুলিশ বাহিনীর দৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

বাঘে ধরলে এক ঘা, পুলিশ ধরলে আঠারো ঘা
জনগণের সেবায় কাজ করার মাধ্যমে পুলিশের প্রতি জনগণের ভীতি ও অনাস্থা পুরোপুরি দূর করতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘বাঘে ধরলে এক ঘা, পুলিশ ধরলে আঠারো ঘা – এ প্রবাদবাক্য যেন মিথ্যা প্রমাণ হয়। পুলিশ জনগণের বন্ধু। মানুষ যেন মনে করে, পুলিশ আমার ভরসার স্থান। সেই বিশ্বাসের জায়গাটা অর্জন করতে হবে। এবং আপনারা অনেকটাই পেরেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে। এই রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনা, এতগুলো মানুষের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বহির্বিশ্বে অপপ্রচার, সাইবার অপরাধসহ নিত্যনতুন বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় পুলিশের বিশেষ দৃষ্টি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।