পৃথিবীকে বাংলাদেশ থেকে শিখতে বললো বিশ্বব্যাংক

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শাফার বলছেন, স্বল্প সময়ে চরম দারিদ্র্যের হার অর্ধেক কমিয়ে দেশটি যে সাফল্য দেখিয়েছে তা থেকে অন্য দেশগুলো শিক্ষা নিতে পারে।

দারিদ্র্য নিরসন ও রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ কীভাবে কাজ করছে, তা সরেজমিনে দেখতে রবিবার বিকালে ঢাকায় এসেছেন বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা। তার আগে দাতা সংস্থার বাংলাদেশ অফিস থেকে তার পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

৮০ শতাংশের বেশি দারিদ্র্যের হার নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশে এখন শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ জনগণই নিজেদেরকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে নিতে পেরেছেন। বর্তমান শতকের দেড় যুগে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি আরও বেড়েছে।

সব শেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশের দারিদ্র্যের হার ২১.৮ শতাংশ। আর অতি দারিদ্র্যের হার ১১.০৩ শতাংশ।

অথচ জন্মের পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিল। পশ্চিমা নামী অর্থনীতিবিদনা এমনও বলছিলেন যে, বাংলাদেশ হবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের উদাহরণ। সেই বাংলাদেশই তার অমিত তেজ দেখিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যেটাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ প্যারাডক্স।

এরই মধ্যে উন্নয়নে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন সে দেশে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নের আকুতির কথা বলছেন বিভিন্ন জন।

বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা হার্টউইগ শাফার বলেন, ‘খুব কম সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার অর্ধেক কাটিয়ে উঠতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের উন্নয়নের উদ্ভাবন ও সাফল্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’

বাংলাদেশ নিজেদের নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মহান উদারতা দেখিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা। বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত তাদের চাহিদা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে এই সংকট মোকাবেলায় দেশটির ক্ষমতা তৈরি করতেও সহায়তা করবে।’

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস জানিয়েছে, এ সফর বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘকালীন অংশীদারত্বের সম্পর্ক আরও গভীর করবে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা করবেন হার্টউইগ শাফার।

চলতি বছরের ১ জুলাই দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি শাফারের প্রথম বাংলাদেশ সফর।

বাংলাদেশ সফরকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন শাফার। তিনি সেখানকার স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন।

‘দক্ষিণ এশিয়ার হটস্পট: তাপমাত্রার প্রভাব এবং জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন’ বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের নতুন একটি প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শাফার। তিনি বিশ্বব্যাংক সমর্থিত একটি প্রকল্প ঘুরে দেখবেন, যা ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করেছে।