ফ্লোরিডাতেই কেন পরমাণু বোমা ফেলবেন পুতিন?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সংসদে তার বাৎসরিক ভাষণে ‘অপ্রতিরোধ্য’ পরমাণু অস্ত্র নিয়ে গর্ব করেছেন।বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেন, নতুন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে হামলা চালাতে সক্ষম।

ভাষণের সময় গ্রাফিক্স ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওপর কিভাবে পরমাণু বোমা বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র ফেলা হবে, তা দেখানো হয়।

কিন্তু, পরমাণু যুদ্ধ শুরু হলে ক্রেমলিন কেন যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যের মধ্যে ফ্লোরিডাকে বেছে নিবেন? ‘সানশাইন স্টেট’ বা রৌদ্রোজ্জ্বল রাজ্য হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডাতে রয়েছে ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড এবং এভারগ্লেডস ন্যাশনাল পার্ক।

কিন্তু, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টের মত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা পুতিনের বাগাড়ম্বরে ‘মোটেও বিস্মিত’ নন।

পেন্টাগনের কর্মকর্তা ডানা হোয়াইট আশ্বস্ত করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের নিশ্চিন্ত থাকা উচিত। কারণ, বিশ্বের যে কোনো দেশের হামলা মোকাবেলার সব রকম প্রস্তুতি আমাদের নেয়া আছে।

পুতিনের দেখানো এনিমেশন ভিডিওতে দেখা যায়, পরমাণু বোমাসহ অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডলের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বেশ কয়েকবার ডোনাল্ড ট্রাম্প মার-এ-লাগোতে সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়েছেন। ওই রিসোর্টে একাধিক নিউক্লিয়ার বাঙ্কার বা পরমাণু যুদ্ধের সময় আশ্রয় নেয়ার জায়গা রয়েছে।

একটি সিরিয়াল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের মালিকের মেয়ে ১৯২৭ সালে ১২৬ কক্ষ বিশিষ্ট রিসোর্টটি তৈরি করেন। কোরিয়ার যুদ্ধের সময় তিনি সেখানে তিনটি বাঙ্কার বানানোর ব্যবস্থা করেন।

সেখান থেকে কয়েক মাইল দূরেই ওয়েস্ট পাম বিচে রয়েছে ট্রাম্পের গলফ কোর্স। সেখানে বোমা হামলার সময় আশ্রয় নেয়ার একটা জায়গা রয়েছে।

দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জন্যও মার-এ-লেক্রের কাছে একটা বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছিল। পাম বিচ থেকে ১০ মিনিট দূরত্বের পিনাট আইল্যান্ডে তিনি প্রায়ই ভ্রমণে যেতেন।

কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যত বুদ্ধি খরচ করেই বাঙ্কার বানানো হোক না কেন, বোমা সেখানে সরাসরি আঘাত হানলে তা সুরক্ষা দিতে পারবে না।

রাশিয়ার আক্রমণের আরেকটা লক্ষ্য হতে পারে ফ্লোরিডার টাম্পা শহরে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান কার্যালয়।

তবে বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, পরমাণু যুদ্ধে ফ্লোরিডা রাশিয়ার আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু হওয়ার কথা নয়।

ম্যাথু ক্রোনিগ, তার ‘দ্য লজিক অফ আমেরিকান নিউক্লিয়ার স্ট্র্যাটেজি’ বইতে লিখেছেন, রাশিয়ার মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া। এ কারণে তারা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা, নর্থ ডেকোটা, নেব্রাস্কা, ওয়াইয়োমিং ও কলোরাডো রাজ্যে তাদের পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডারগুলোতে আক্রমণ চালাবে।

একই সঙ্গে রাশিয়ার লক্ষ্য থাকবে ওয়াশিংটন ও জর্জিয়া রাজ্যে আমেরিকার সাবমেরিন ঘাঁটি ধ্বংস করা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে ১৩১টি শহরে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে সেগুলোতে দু’টো করে বোমা ফেলা।

এভাবে তারা আমেরিকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশটির সব ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস করে দিতে চাইবে বলে মনে করেন ক্রোনিগ।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মার্ক ফিটজপ্যাট্রিক বিবিস্কে বলেন, ‘ফ্লোরিডায় আক্রমণের ভিডিও যুদ্ধের আক্রমণের কোনো কৌশল নয়, এটা একটা বার্তা । এটা শুধুই প্রতীকী ভিডিও।’