বগুড়ায় লাখো পূণ্যার্থীদের মিলন মেলা ঐতিহাসিক মহাস্থানে

উত্তরের তীর্থস্থানখ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড়ে হয়রত শাহ সুলতান মাহিসওয়ার বলখী (রঃ) এর ওরস উপলক্ষে বসেছে লাখো সাধু-সন্ন্যাসী ও পূণ্যার্থীদের মিলনমেলা। প্রতিবছরের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার বসে এই মেলা। মেলায় আগত ভক্তরা আধ্যাত্মিক ইবাদত বন্দেগীতে মেতে ওঠেন। এ উপলক্ষে বসে গান বাজনার আসর।

মাজার কর্তৃপক্ষ জানায়, পুন্ড্রনগরের অত্যাচারী রাজা পরশুরামকে পরাজিত করে সুফী সাধক হয়রত শাহ সুলতান মাহিসওয়ার বলখী (রঃ) মহাস্থানগড় বিজয় করেন। পরশুরামের বোন শিলা দেবী করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জনও দেন। আর দিনটি ছিলো বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। যা প্রায় দু’হাজার বছর আগের কথা। সেই থেকেই উভয় ধর্মের মানুষ এই দিনে মহাস্থানে সমবেত হন। তারা অবস্থান নেন হযরত বোরহান উদ্দিন (রঃ) মাজার, পশ্চিম পাশের আমবাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকায়। এছাড়া মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থান এলাকায় বসে মেলা।

মেলাঘুরে দেখা যায়, মাজার এলাকায় অর্থ ও খাবার পাওয়ার আশায় অগণিত ফকির-মিসকিন সমবেত হন। তারা অর্থ প্রাপ্তির আশায় সারিগান গেয়ে মাজার প্রাঙ্গণ মুখরিত করে রাখেন। মহাস্থানে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ও আশাপ‚ রণের জন্য অনেকেই মাজারের পশ্চিমপাশে দুধ-পাথরে দুধ ঢেলে দেন। এই মেলায় মাজারের পশ্চিম পাশের মাঠে রকমারি পণ্যের মেলা বসেছে। মেলায় আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব সামগ্রী কেনাকাটা করেন। সঙ্গে থাকে মহাস্থানের ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত কটকটি। এছাড়াও জাদু খেলার নামে চলেছে অশ্লিল নৃত্য ও গাঁজা সেবন।

ঢাকা শাহআলীর থেকে আগত লিটন পাগলা (ছিকোল বাবা) বলেন, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য আমি সিদ্ধি সেবন করি। আমি ৮৫ কেজি ওজনের শিকোল পরে বাবার আরাধনার জন্য মহাস্থানে এসেছি।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ির বাবলু মিয়া ও রংপুরের রোমেনা বেগম বলেন, আমরা প্রায় ৪০বছর থেকে সুলতান বাবার চরণধূলি নেওয়ার জন্য ওরসে এই দিনে আসি।

মহাস্থান মাজার মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম বলেন, মেলার শৃঙ্খলার দায়িত্বে ৫০২জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ২৫০জন স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক কাজ করেছে।

শিবগঞ্জ থানার ওসি মনজুরুল আলম বলেন, ছোটখাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত মেলার সার্বিক পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। একদিনের হলেও সেখানে গত তিন দিন ধরেই লোক সমাগম শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে লোক সমাগম একই রকম থাকবে।