বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র উদঘাটনে তদন্ত কমিশন করার দাবি- মেনন

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদঘাটনে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। আইনমন্ত্রী বার বার এটা বলেছেন। তবে আমরা এটা বাস্তবে দেখতে চাই।

বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তীব্র ঘৃণা জানাতে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তার প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। এ চক্রান্ত উদঘাটন করতে না পারলে এটা প্রতিহত করা যাবে না। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, যে কার্যকরণের সম্পর্কগুলো কাজ করেছে, এ বিষয়গুলো নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের স্বরূপটা না বুঝতে পারলে আজকের চক্রান্তও বুঝতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার লাশ ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় তার দলের সহকর্মীরা মন্ত্রিসভায় যোগদান করেছিলেন। আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীর প্রধানরা দলে দলে গিয়ে খুনিদের কাছে আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। পরবর্তীকালে আমরা সেই সরকারের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে জেনারেল ওসমানীকে দেখেছি। মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে দেখেছি আনুগত্য প্রকাশ করতে। তিনি পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের এমপিও হয়েছিলেন। সেই ব্যক্তিরা পরবর্তীকালে কী ভূমিকায় ছিলেন, কী ভূমিকা পালন করেছেন, সেটা আমাদের জানার দরকার বলে বলে করি।

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির প্রসঙ্গ টেনে মেনন বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের বিচার আইনি বাধার মুখে পড়ে। খন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। জিয়াউর রহমান সেই আইনকে সাংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে সেটা যুক্ত করেছিলেন। এ বিচার রাজনৈতিক বাধার মুখেও পড়ে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, কেবল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত মনে করলে আমরা ভুল করবো। আত্মস্বীকৃত খুনিদের বক্তব্যগুলো খতিয়ে দেখলেই এ বিষয়টি আমরা জানতে পারবো। খুনি কর্নেল ফারুক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলেন বলেই তাকে আমরা হত্যা করেছি। আমরা পরবর্তীকালে দেখেছি, কীভাবে আমাদের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ পড়েছে। কীভাবে সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কীভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হয়েছে।

একাধিক বই ও প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘কেবল হত্যাকাণ্ডের দিন নয়, ১৯৭২ সাল থেকেই এ চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। ফারুক ও রশীদ মার্কিন দূতাবাসে গেছেন অস্ত্রের সন্ধানে। সেই সময়কার মার্কিন দূত পরবর্তীকালে সেটা স্বীকারও করেছেন। অবশ্য সিইআইএ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না সেটা তিনি (মার্কিন দূত) বলতে পারেননি।