‘বজ্রপাত’: আল্লাহর শক্তিমত্তার মহানিদর্শন, মানুষের জন্য সতর্কবার্তা

বৈশাখ শেষে জৈষ্ঠ্যের শেষ দশকে তীব্র এ তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। কঠিন রোদ আর গরমে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তীব্র সূর্যতাপের আগুন ঝরা গরমে মানুষের জীবন করে তুলেছে ওষ্ঠাগত। ছায়াতেও স্বস্তি মেলে না। পাওয়া যাচ্ছে না শীতল আবাসের ঠান্ডা হাওয়া। বাতাসে যেন আগুনের ঝাঁঝ মেশানো। বহমান নদীগুলো আর নদী নেই। সব নদনদী শুকিয়ে কাঠ।

গরমে অতিষ্ঠ মানুষ যখন বৃষ্টির জন্য চাতকের মতো অপেক্ষা করছিল। বা’দ মাগরিব অবশেষে মেঘের আনাগোনা ছাড়াই হালকা ঝড়ো হাওয়াসহ হঠাৎ নেমে এলো সেই স্বস্তির এক পশলা বৃষ্টি।
الحمد لله، ثم الحمد لله. حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه.

কিন্তু স্বস্তির এই বৃষ্টির সাথে আসা মেঘের গর্জন বা বিদ্যুৎ চমক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই মেঘের গর্জন অত্যন্ত বিপজ্জনক। যে বজ্রপাত আজকের খুব বেশি লক্ষ্য করা গেছে। মনে রাখা জরুরী মেঘের গর্জন তথা বজ্রপাত হচ্ছে আসমানি দুর্যোগ। মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখার একটি সতর্কবার্তাও বটে। এ বজ্রপাত আল্লাহ তাআলা শক্তিমত্তার এক মহানিদর্শন। তিনি ইচ্ছা করলেই যে কাউকে এ বজ্রপাতের মাধ্যমে শাস্তি দিতে পারেন। আবার মানুষও এ বজ্রপাত থেকে সর্বোত্তম শিক্ষা নিতে পারে।

মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তাআ’লা কুরআনের একটি সুরা নাম রেখেছেন রা’দ। যার অর্থও বজ্রপাত। বজ্রপাত নামে নাজিল হওয়া সুরায় মহান আল্লাহ সে কথাই ঘোষণা করেছেন-যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন-
هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ – وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلاَئِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاء وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ

“তিনিই তোমাদের বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্য এবং আশার জন্য এবং উপেক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা। তাঁর (তাহমিদ) প্রশংসা কর। বজ্র এবং ফেরেশতারাও তার ভয়ে (তাসবিহরত)। তিনি বজ্রপাত করেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি তা (বজ্রপাত) দ্বারা আঘাত করেন। এরপরও তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।”

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে আসমানি দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে বেঁচে থাকতে শিখিয়েছেন দোয়া। যারা এ দোয়া পড়বে আল্লাহ তাআলা তাদের বজ্রপাতের ক্ষতি থেকে হেফাজত করবেন।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন থেকে আশ্রয় লাভ করতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পেতেন তখন বলতেন—
ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﻟَﺎ ﺗَﻘﺘُﻠﻨَﺎ ﺑِﻐَﻀَﺒِﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻬﻠِﻜﻨَﺎ ﺑِﻌَﺬَﺍﺑِﻚَ ﻭَﻋَﺎﻓِﻨَﺎ ﻗَﺒﻞَ ﺫٰﻟِﻚَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা- বিআজাবিকা ওয়া’আ ফিনা ক্বাবলা জালিক। (আহমদ, তিরমিজী, মিশক্বাত, হাদিস-১৪৩৩)
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার রোষের দ্বারা হত্যা করো না; তোমার শাস্তির দ্বারা আমাদেরকে ধ্বংস করো না; বরং এর পূর্বেই আমাদেরকে প্রশান্তি দান করো।

এছাড়া আসমানের গর্জন তথা বজ্রপাতের আক্রমণে মৃত্যু থেকে বাঁচতে ছোট্ট একটি তাসবিহ পড়ার কথা এসেছে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ مصنف ابن أبي شيبة তে। তাতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ তাসবিহ পড়বে- “سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ” ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।’ সে বজ্রপাতের আঘাত থেকে মুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আসমানি দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে মুক্ত থাকতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়া এবং তাসবিহ পড়ে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক:
প্রভাষক মুহাম্মাদ আসাদুজ্জামান ফারুকী,
মাওলানা, লেখক ও সাংবাদিক;
খতিব, কলারোয়া থানা জামে মসজিদ, সাতক্ষীরা।