বাংলাদেশকে ‘আফগান মডেল’ বানানোর পরিকল্পনা ছিল হেফাজতের

হেফাজতে ইসলামকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে সরকার পতনের লক্ষ্যে চক্রান্ত হয়েছিল। হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ বছরও আবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে একই ধরনের চক্রান্ত হয়েছে। এটা তদন্তে অকেটাই পরিষ্কার। হেফাজত সরকার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান মডেলে বানানোর পরিকল্পনা করেছিল।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর মিন্টু রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে অনির্ধারিত এক ব্রিফিংয়ে, হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানান যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।

তিনি বলেন, আমাদের হাতে সম্প্রতি দায়ের হওয়া ১২টি এবং পুরোনো ৫৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার প্রেক্ষিতে আমরা হেফাজতের ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোরআন-হাদিস জানেন এমন পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। তদন্তে হেফাজতের নাশকতার মূল উদ্দেশ্য, কারা করছে, কেন করছে তা জানার চেষ্টা চলছে।

যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম আরও বলেন, হেফাজত নিজেদের অরাজনৈতিক দল বলে দাবি করে। কিন্তু তাদের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা এজেন্ডা আছে। হেফাজতের মাধ্যমে তারা এসব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। হেফাজত এমন একটি সংগঠন, যার ডাকে সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ডেকে আনা সম্ভব।

হেফাজত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ২০১৩ সালেও বাবুনগরী ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে মুফতি ফখরুল ইসলাম নামে একজন হেফাজত নেতা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে তারা এসব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বলেছেন।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ হেফাজত নেতা মনে করেন, হেফাজত একমাত্র প্লাটফর্ম, যেটা ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে কাজে লাগতে পারে। এ জন্য তারা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, কার্যক্রম চালাতো।

হেফাজতের বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বানানোর পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, সরকার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান মডেলে বানানোর পরিকল্পনা করেছিল হেফাজত। হেফাজতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাগ আছে। একটি উগ্রবাদের পক্ষে। তদন্তে উগ্রবাদের পক্ষে যারা, তাদের নাম জানার চেষ্টা চলছে। উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িতরা সম্প্রতি যে নাশকতা চালিয়েছে সেগুলোর অডিও-ভিডিও সংগ্রহ করে ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, হেফাজতের অর্থের উৎস বিষয়ে জানতে চাইলে বাইরে থেকে অর্থ আসার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের ব্যবহার করে হেফাজত নেতারা বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভব ও গাড়ি-বাড়ি করেছে। তদন্তে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হেফাজতের সঙ্গে ইসলামপন্থী ছাড়াও মূল ধারার রাজনৈতিক দল জড়িত জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের যোগসাজস রয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লন্ডন থেকে ওলামা দলের এক নেতা হেফাজত নেতাদের পক্ষে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। হেফাজত নেতাদের নাকি হিন্দু পুলিশ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, কোরআন শরিফ টয়লেটে ফেলা হয়েছে, মামুনুল হককে মারধর করা হচ্ছে, এরকম অনেক প্রোপাগান্ডা ছাড়ানো হচ্ছে। এসবের অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।