বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআরের চুক্তি ১৩ এপ্রিল

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে আগামী ১৩ এপ্রিল। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে ইউএনইচসিআরের সদর দপ্তরে এ চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের যে চুক্তি হয়েছিল, তার আদলেই এ চুক্তি স্বাক্ষর হবে। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডি এই চুক্তি স্বাক্ষর করবেন।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে হওয়া চুক্তি (অ্যারেঞ্জমেন্ট) বা মন্ত্রী পর্যায়ে একাধিক বৈঠক করেও রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহায়তার লক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এ চুক্তি সম্পাদিত হলে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া, চিকিৎসা ব্যবস্থা, অন্যান্য সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি তাদের রোহিঙ্গা) মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পর সেখানে (রাখাইন) নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার বিষয়ে কাজ করবে সংস্থাটি। এজন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে তারা।

উল্লেখ্য, এর আগে গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার ও শরণার্থী সংস্থার মধ্যে তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত করেছিল। এটি ১৩ এপ্রিল হতে যাওয়া চুক্তির সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর দমন পীড়নের মুখে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর একটি সম্মতিপত্রে সই করে দুই দেশ। এরপর বাংলাদেশের তরফে দুদফা রোহিঙ্গাদের নাম সংবলিত তালিকাও দেয়া হয় মিয়ানমারকে। যদিও দেশটি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নানা তালবাহানার আশ্রয় নিচ্ছে।

এদিকে গত বুধবার মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম মিজিমা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের তরফে দেয়া আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা থেকে মাত্র ৬৭৫ জন ফেরত নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার। দেশটির ইমিগ্রেশন ও পপুলেশন ডিপার্টমেন্টের স্থায়ী সচিব মিন্ট কায়িং উদ্ধৃত করে এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা দেয়া হলেও তারা এর মধ্যে আটশ জনের মতো রোহিঙ্গার নাম অনুমোদন করেছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলেও জানান মিন্ট কায়িং।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত আরসার হামলার ধুয়ো তুলে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসী’দের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছিল। তখন নির্যাতন নিপীড়ন থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে আনুমানিক ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো মিয়ানমার অসম্ভব করে তুলেছে। সেখানে (রাখাইন) রোহিঙ্গাদের ফেরত যাবার মতো কোনো নিরাপদ পরিস্থিতিও নেই।

রোহিঙ্গা নিধণের ঘটনাকে মিয়ানমারের পূর্বপরিকল্পিত এবং সেখানে (রাখাইন) রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা হয়েছে বলেও অভিযোগ করে আসছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহারণ’ বলেও আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।