বাপ-দাদার জমি ফিরে পেতে এখনো অনড় সাঁওতালরা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে নির্মম হামলার পর এক বছরেও নিরাপত্তার শঙ্কা কাটেনি সাঁওতালদের। আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বরং পাল্টা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন তারা।

এদিকে উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাপমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে সোমবার সকাল থেকে সাঁওতাল হত্যা দিবস উদযাপন হচ্ছে। গত বছরের এই দিনে পুলিশের গুলিতে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অন্ততপক্ষে ২০ জন।

আজকের সাঁওতালদের এই বর্ষপূতি অনুষ্ঠানটি ঘিরে জেলা পুলিশ-র‌্যাব ও পিবিআইয়ের সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

আজ সেখানে গিয়ে জানা যায়, রংপুর চিনিকলের অধীনস্থ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে বিতাড়িত সাঁওতাল-বাঙালিরা ভালো নেই। তারা বাপ-দাদার জমি ফিরিয়ে পাওয়ার দাবিতে এখনো অনড় রয়েছেন।

মাদারপুর গ্রামের বাসিন্দা জোসনা মুরমু বলেন, আমরা পুনর্বাসন চাই না, আমরা চাই আমাদের বাপ-দাদার জমি ফিরিয়ে পেতে। একই গ্রামের বাসিন্দা হাসনা বানু ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত বছরের ৬ নভেম্বর থেকে জয়পুর ও মাদারপুর গ্রামে আমরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, শীত আমাদেরকে দাবি থেকে সরাতে পারেনি, সরকারও পারবে না।

সাঁওতালদের পক্ষে মামলার বাদী থোমাস হেমরম অভিযোগ করে বলেন, গত বছরের ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জ চিনিকলের জায়গায় গড়ে তোলা সাঁওতাল-বাঙালির পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে দেয়া হয়। তাদের ঘরবাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র, গরু, ছাগল ও চালাঘরের ঢেউটিন লুঠ করা হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে শ্যামল হেমরম, মঙ্গল টুডু ও রোমেশ টুডু নামে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন।

এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। কিন্তু গত এক বছরে এর মধ্যে মাত্র একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। অন্যান্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালোও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, মামলাটি তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে সাঁওতালদের লুণ্ঠিত ঢেউটিন উদ্ধারসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, সাঁওতালদের পুনর্বাসনের জন্য কাটাখালী নদীর তীরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তাদের পুনর্বাসিত করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে রংপুর চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে তীরবিদ্ধ হয়েছেন নয়জন পুলিশ সদস্য এবং গুলিবিদ্ধ হন চারজন সাঁওতাল। এঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজন সাঁওতাল মারা যান। এসময় সাঁওতালদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা।