বিএনপির কর্মকাণ্ডে হতবাক ব্যবসায়ীরা

প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বর্জনের প্রচারের বিষয়টিকে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার সমান বলে মনে করছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, যাঁরা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের হীন স্বার্থে দেশের ক্ষতি করছেন। বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আনে নিজেদের স্বার্থে, ভারতকে ভালোবেসে নয়। পোশাক খাতের কাঁচামালের বড় অংশ আসে দেশটি থেকে।

দেশে চীনের পরই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করা হয় ভারত থেকে। দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্য কম খরচ ও কম সময়ে সহজেই পরিবহন করা যায়। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাশ্রয় হয়। শিল্পের বৃহত্তম স্বার্থেই সে দেশ থেকে পণ্য আসে।

ফলে তাদের পণ্য বর্জনের এমন প্রপাগান্ডা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করার সমান বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যারা পণ্য বর্জনের আহবান জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে আঁতাত করে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে। দলটি আবারও দেশকে অশান্ত করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশে শান্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ চায়।

সেই হিসেবে যাদের সঙ্গে তাদের নীতিগত মিল রয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভারত তার নিজ স্বার্থে বাংলাদেশকে শান্ত দেখতে চায়।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য। রপ্তানি করে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য।

আমদানি করা পণ্যের মধ্যে বেশির ভাগই শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য।
ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, এমন আত্মঘাতী প্রচার দেশের ভোগ্য পণ্যের বাজার অস্থির করে দেবে। এতে সুযোগ নেবে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের অসাধু ব্যক্তিরা। এ কাজ সরকারবিরোধী। তারা দেশের জনগণের ক্ষতি চায় বলে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে।

বাংলাদেশে নিত্যপণ্য চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনির বেশির ভাগ আসে ভারত থেকে। অথচ অন্যদিকে সরকার দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য বাধা সহজ করে দেশটির ওপর দিয়ে নেপাল-ভুটানে পণ্যপরিবহন সহজ ও মুক্ত বাণিজ্য বড় করার কথা ভাবছেন।

জানতে চাইলে আইবিসিসিআই প্রথম সহসভাপতি এম শোয়েব চৌধুরী বলেন, ভোগ্য পণ্যসহ পোশাক খাতের কাঁচামাল সুতা, তুলা, বিভিন্ন কারখানার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ভারত থেকে বেশি আমদানি করা হয়। দেশটি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের বাজারে সেসব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ে। পেঁয়াজ ও চিনি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় ৩৫ টাকার পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা বেশি হয়ে যায়। কাজেই সরকারবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল এই প্রপাগান্ডা করছে, তারা দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতি করছে।