বিএনপি জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়নে জটিল সমীকরণ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। সারা দেশে ২৮০ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে রাজপথের এ বিরোধী দল।

২৮০ আসনে ৮০০-এর বেশি প্রার্থীকে ধানের শীষের টিকিট দেয়া হয়েছে। আসনপ্রতি গড়ে প্রায় তিনজন করে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন।

যে ৮০০ প্রার্থীকে চিঠি দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএনপির বাইরেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদেরও কোনো কোনো আসনে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। যারা বিএনপির টিকিট নিয়েছেন সবাই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।

বিএনপির নির্বাচনী সঙ্গী দুই জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে জটিল সমীকরণের মুখে পড়েছে দলটি। আসন ভাগাভাগি নিয়ে কিছুটা মান অভিমানও সৃষ্টি হয়েছে।সব জটিলতা কাটিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এক সপ্তাহ সময় পেল দলটি।

গত দুদিনে ২৮০ আসনে প্রার্থী দিলেও বাকি ২০ আসনে কাউকে চিঠি দেয়া হয়নি। জোটের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা না হওয়ায় ওই সব আসনে কাউকে ধানের শীষের টিকিট দেয়া হয়নি।

ওই ২০ আসনে জোটের শরিক দলগুলো নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। আজ মনোনয়ন দাখিলে শেষ দিন।

৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিএনপি জোটের আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।

মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে সমঝোতার ভিত্তিতে একজনকে রেখে বাকিদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। সমঝোতার ভিত্তিতেই জোট ও ঐক্যফ্রন্টের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে এই সময়ে।

সূত্র জানায়, ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সর্বোচ্চ ৬০ আসন ছাড়তে চায় বিএনপি। তবে দুই জোটের শরিকদের চাহিদা আরও বেশি।

২০-দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ৪২ আসন ছাড় দিচ্ছে বিএনপি। এর মধ্যে সর্বাধিক আসন পাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটিকে ২৪ আসনে ছাড় দেবে বিএনপি। জোটের শরিক এলডিপি পাচ্ছে চার আসন।

তবে ১৮ আসন ছাড়তে চাইলে এখনও রাজি হয়নি ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা। তাই আপাতত ৬০টিরও বেশি আসনে দুই জোটের শরিকরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে এখনও ১১ দিন সময় বাকি আছে। দুই জোটের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এই সময় অনেক।

গতকাল সকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ ও আশাব্যঞ্জক হয়েছে।

ড. কামালও বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তালিকাগুলো নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে। শিগগিরই ঠিক করা হবে।

বিকালে সাংবাদিকদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জোট ও ফ্রন্টের জন্য ৬০ আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, দল থেকে এখন পর্যন্ত আট শতাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছি। ২০-দলীয় জোটের শরিকদেরও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন দিচ্ছে। এটি পরে আমরা ঠিক করে নেব। ২০-দলীয় জোটের শরিকদের কত আসন ছাড়ছেন, প্রশ্ন করা হলে- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, সঠিক সংখ্যা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। তবে সম্ভবত ৫০।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের কেমন আসন ছাড়া হবে জানতে চাইলে ফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, এখন তারা তাদের দল থেকে মনোনয়ন দিচ্ছেন। পরে এটি আলোচনা করে ঠিক করা হবে। তাহলে কি ছেড়ে দেয়া আসন সংখ্যা ৬০-এর বেশি হবে না- এ রকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে হয়।

জানা গেছে, ২০ দলের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের চাহিদা অনেক বেশি। বিষয়টি নিয়ে দরকষাকষি চলছে।

এ নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।

আজ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। এর বাইরে আপাতত প্রতি আসনেই মনোনয়নপত্র জমা দেবেন একাধিক প্রার্থী। জোটের শরিকদের ছাড় দেয়া আসনেও বিএনপি প্রার্থী রাখবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনের একদিন আগে ৮ ডিসেম্বর ধানের শীষের একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেয়ার আগ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে দলীয় প্রার্থীর নাম জানানো হবে না। চিঠি পাঠিয়ে তারপর তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীদের নাম প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত সময় আছে। এ কারণে প্রার্থীদের চিঠি দেয়ার বিষয়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।