বিদ্যুৎ বিভাগের নামের ভুলে বৃদ্ধের বদলে যুবকের কারাভোগ!

গাইবান্ধায় বিদ্যুৎ বিভাগের করা বিলখেলাপির এক মামলায় বৃদ্ধের বদলে বিনাদোষে কারাভোগ করেছেন আব্দুল রাজ্জাক মিয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তি। জামিন পেতে সেই যুবককে হতে হয়েছে হয়রানি। পাশাপাশি খরচ করতে হয়েছে লাখ টাকা।। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন গাইবান্ধা নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডিভিশন-২) কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।

বিনাদোষে কারাভোগ করা ব্যক্তি গাইবান্ধা সদর উপজেলার রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত সমেস উদ্দিনের ছেলে। তিনি ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। আব্দুল রাজ্জাক মিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন গাইবান্ধা নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডিভিশন-১) গ্রাহক। অথচ ভুল করে ডিভিশন-২-এর দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মামলা দিয়ে তাকে কারাভোগ করিয়েছেন চারদিন।

বিদ্যুৎ বিভাগের (নেসকো-২) বিলখেলাপি মামলার প্রকৃত আসামি ৮৪ বছরের বৃদ্ধ একই গ্রামের আব্দুল রাজ্জাক। তার বাবার নাম কিয়ামত উল্লা। তিনি নেসকো-২-এর গ্রাহক এবং বিলখেলাপি।

আব্দুল রাজ্জাক মিয়া জানান, কয়েক বছর আগে তার নামের একটি সেচপাম্প বিক্রি করেন চাচাতো ভাই শফিকুল মিয়ার কাছে। এরপর থেকে শফিকুল মিয়া সেচপাম্পটি পরিচালনাসহ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু বিলখেলাপির দায়ের করা বিদ্যুৎ বিভাগের মামলায় চলতি বছরের ১৪ মার্চ গভীর রাতে ঘুম থেকে তাকে ডেকে তুলে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশ। চারদিন কারাভোগ শেষে রংপুরের বিদ্যুৎ আদালতের জামিন আদেশে ১৮ মার্চ মুক্তি পান তিনি।

গ্রেফতারের পর জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ও সেচপাম্পের বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে থানা ও বিদ্যুৎ অফিসে যান তার পরিবারের লোকজন। এ সময় নির্দোষ দাবি করলেও পুলিশের হাত থেকে আব্দুল রাজ্জাককে ছাড়াতে পারেনি পরিবার।

তিনি আরও জানান, পুলিশ গ্রেফতার করার আগে বিদ্যুৎ অফিসে তিন-চার দিন গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী ভুল স্বীকার করে নাম সংশোধনের আশ্বাস দিলেও তিন মাসেও সংশোধন করেননি। নির্বাহী প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে আমার এত বড় ক্ষতি হলো। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া বিদ্যুৎ অফিসের এমন কাণ্ডে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন আব্দুল রাজ্জাক মিয়া।

স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের বিল বকেয়ার দায়ে রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত কিয়ামত উল্লার ছেলে বৃদ্ধ আব্দুল রাজ্জাকের নামে মামলা না দিয়ে নিরপরাধ একই গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আব্দুল রাজ্জাক মিয়ার নামে মামলা দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এ কারণে বিনাদোষে আব্দুল রাজ্জাক মিয়াকে চারদিন কারাভোগ করতে হয়।

কারাভোগ করা আব্দুল রাজ্জাক মিয়ার চাচি আছমা বেওয়া বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের গাফিলতির কারণে আমার ভাতিজাকে বিনাদোষে কারাভোগ করতে হয়েছে। এটা অন্যায়। এর বিচার চাই।

ঘটনার সত্যতা জানতে মূল আসামি বৃদ্ধ আব্দুল রাজ্জাকের সাথে কথা বলে জানা যায় তার নামের সেচপাম্পটি তিনি কয়েক বছর আগে পাশের গ্রামের রঞ্জু মিয়ার কাছে বিক্রির দাবি করেন।

এ বিষয়ে বৃদ্ধ আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী বাসমনি বেওয়া বলেন, আমাদের কোনো বিল বাকি নাই। যা ছিল তা পরিশোধ করেছি।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী মুরাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের এমন মামলা অযৌক্তিক। এ কারণে বিনাদোষে চারদিন কারাভোগ করেছেন আব্দুল রাজ্জাক মিয়া। এতে তিনি আর্থিকসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এটি বিদ্যুৎ অফিসের গাফিলতির একটি বড় দৃষ্টান্ত। সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-২) ইমদাদুল হক বলেন, বক্তব্য নিতে গেলে ভিকটিমকে নিয়ে আসেন। এটা তো সমাধান হয়ে গেছে। এই ভুলের কারণে তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এটি সোর্সের ভুলে হয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়েছে। দুজনের নামই আব্দুল রাজ্জাক। শুধু ভুল হয়েছে বাবার নামে। আমি তো স্থানীয় না; বগুড়ার ছেলে। ইনফরমার ভুল তথ্য দিলে আমার কি করার আছে।