বেয়াইয়ের বিদ্যুৎ বিল বেয়াইয়ের ঘাড়ে!

বিলের ভয়ে গরমের মধ্যেও ফ্যান ছাড়েন না আবদুল হামিদ। প্রতি মাসে তাঁর বিল আসে গড়ে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। অথচ মে মাসে হঠাৎ করে বিল এল ৬৮২ টাকা।

এত বেশি বিল পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার আবদুল হামিদের। জানালেন, বেয়াইয়ের বকেয়া বিলও চাপানো হয়েছে তাঁর ঘাড়ে। কারণ জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সাফ জানিয়ে দেয়, আবদুল হামিদের বেয়াই রবিকে তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই বেয়াইয়ের বিল আবদুল হামিদকেই শোধ করতে হবে।

মনের দুঃখে আবদুল হামিদ যান স্থানীয় প্রেসক্লাবে। সাংবাদিকদের জানান তাঁর অভিযোগ।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া বিদ্যুৎ বিলে দেখা যায়, আক্কেলপুর পৌর শহরের পূর্ব হাস্তাবসন্তপুর মহল্লার আবাসিক বিদ্যুৎ গ্রাহক আবদুল হামিদের হিসাব নম্বর ০৭/০৫৯/৪১২০। ৪ এপ্রিল থেকে চলতি মে মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত তাঁর নিট বিল ১৬০ টাকা। মাশুলসহ বিল পরিশোধের শেষ তারিখ ৬ জুন। ওই বিলের সঙ্গে ৮৫৯-২৮০০ নম্বর হিসেবের বকেয়া ৪৯৬ টাকা যুক্ত করা হয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, এত বেশি বিলের কারণ জানতে তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে যান। ক্যাশ থেকে বিলটি নিয়ে তাঁকে উপমহাব্যবস্থাপকের কাছে যেতে বলা হয়। উপমহাব্যবস্থাপক ইয়াকুব আলী শেখ বলেন, ‘আপনার বেয়াই রবির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। সেই বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আপনার বিলে যুক্ত করা হয়েছে। আপনার বেয়াই রবিকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। যেহেতু রবি আপনার বেয়াই, সেহেতু তাঁর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে।’

বেয়াইয়ের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দিতে যাব কেন? এমন প্রশ্নে উপমহাব্যবস্থাপক আবদুল হামিদকে বলেন, আত্মীয় তো আত্মীয়ের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে।

আবদুল হামিদের আত্মীয় আক্কেলপুর পৌরসভার কর্মচারী সোহেল আখতার পারভেজ বলেন, ‘আমি আবদুল হামিদের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপকের কাছে গিয়েছিলাম। বেয়াইয়ের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বেয়াইকে পরিশোধ করতে হবে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনা স্বীকার করে জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক ইয়াকুব আলী শেখ বলেন, ‘আবদুল হামিদের বেয়াই রবির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। আমরা তাঁকে খুঁজে পাচ্ছি না। এ কারণে রবির বকেয়া বিদ্যুৎ বিল তাঁর বেয়াই আবদুল হামিদের বিদ্যুৎ বিলে যুক্ত করে দিয়েছি। সরকারি টাকা মেরে খাওয়ার কোনো উপায় নেই। আবদুল হামিদকেই তাঁর বেয়াইয়ের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে।’

জয়পুরহাট আদালতের আইনজীবী রাজেন্দ্র প্রসাদ আগরওয়ালা বলেন, ‘বেয়াইয়ের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বেয়াইকে পরিশোধ করতে হবে, এটি যুক্তিসংগত কথা নয়। এটি অন্যায় আবদার।’