ভারতের এই স্থানে প্রতি কেজি লবনের দাম ১৮০ টাকা, চিনি ২৫০ টাকা

বিশ্বাস করাটা কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু এখনও ভারতেরই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সাবেক সেনা ও তাদের পরিবারকে প্রতি কিলো লবন কিনতে খরচ করতে হয় ১৮০ টাকা (বাংলাদেশী মুদ্রায়)৷ এক কিলো চিনির দাম ২৫০ টাকা (বাংলাদেশী মুদ্রায়)৷ তাও অবশ্য মেলে না সবসময়৷

যে জায়গাটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি হল অরুণাচল প্রদেশে ভারত-মায়ানমার সীমান্তের কাছে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের মতো এলাকা – বিজয়নগর৷ হিমালয়ের কোলে ছবির মতো দেখতে এই গ্রাম প্রায় ৮০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত৷

১৯৬১ সালে ভারতের আসাম রাইফেলসের আইজি মেজর জেনারেল এ এস গুরায়ার নেতৃত্বে আধাসেনার একটি বাহিনী অরুণাচল প্রদেশে এই এলাকাটি আবিষ্কার করে৷ এ এস গুরায়ার পুত্রের নামে জায়গাটির নামকরণ করা হয়৷ বর্তমানে বিজয়নগরে প্রায় ৩০০ পরিবারের বাস৷ মূলত সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাস করেন এখানে৷

ভারত-মায়ানমার সীমান্ত নির্ধারণের পর আসাম রাইফেলসের অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও তাদের পরিবারকে এখানে পুনর্বাসন দেওয়া হয়৷ তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়, দ্রুতই ওই এলাকায় রাস্তা, স্কুল-সহ জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় পরিষেবা চালু হয়ে যাবে৷ দেওয়া হবে চাষবাসের জন্য জমিও৷ কিন্তু ২০১৭ সালেও ছবিটা এমন কিছুই পাল্টায়নি৷

স্থানীয় বাসিন্দা জেড রালতে এই প্রসঙ্গে বলছেন, “১৯৬৪ সালে তৎকালীন আসাম রাইফেলসের সদস্য ছিলাম আমি৷ ভারত সরকার আমাদের এখানে ৫০ একর জমি দেওয়ার আশ্বাস দেয়৷ কিন্তু আমরা পেয়েছি মাত্র ১১ একর৷ সেই থেকে চাষবাস করে খাচ্ছি৷ এখন যা অবস্থা আমাদের লবন কিনতে হয় ১৫০ রুপি দিয়ে৷ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে কষ্ট হয় প্রবীণদের৷”

শুধু নুন-চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যই নয়, স্থানীয় হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার৷ বিমানপথ ছাড়া যাওয়ার অন্য কোনও উপায় নেই৷ বিজয়নগরে পৌঁছাতে স্থানীয় সদর থেকে সময় লাগে অন্তত ৭-১০ দিন৷ ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কোথাও কোথাও হাঁটাপথ ছাড়া উপায় নেই৷

ফোন করতে একটিমাত্র পিসিও থেকে প্রতি মিনিটে পাঁচ টাকা খরচ করতে হয়৷ তবে আসাম রাইফেলসের সদস্যরা নিয়মিত সাহায্য করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ তাদের দাবি, এবার অন্তত বাচ্চাদের পড়াশোনা ও গর্ভবতীদের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করুক সরকার৷