ভারতের নাগরিকত্ব আইনে বিএনপি নেতাদের উদ্বেগ

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মনে করছে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকদের বেশির ভাগই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই আইন কার্যকরের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ভারতে আইন পাস হওয়ার চার বছর পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হয়েছে গত ১১ মার্চ থেকে। ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার এই আইন পাস করেছিল।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির কেউ কেউ মনে করেন, এ আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে বাংলাদেশে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

তবে কমিটির বেশির ভাগ নেতার মত হচ্ছে, এটি কোনোভাবেই অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না। আইনটি কার্যকর হলে সেখানকার মুসলমান সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের মুসলমানরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে পরবর্তী বৈঠকেও আলোচনা হতে পারে।

সংশোধিত আইনে বলা আছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, এ আইনে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে এ আইনে মুসলিম সম্প্র্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ না থাকায় আইনটি বৈষম্যমূলক বলে সমালোচিত হয়েছে। তা ছাড়া তামিল উদ্বাস্তুদের বাদ দেওয়া নিয়েও আইনটি দক্ষিণ ভারতে সমালোচিত হয়েছে।

ভারতের মুসলমানদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা, প্রথমে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সেই সব দেশের সংখ্যালঘু মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, আর এরপর মুসলমানদের চিহ্নিত করে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি হালনাগাদ করার নাম করে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হতে পারে। তবে বিজেপি সরকার বারবারই বলেছে যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন নেতা  বলেন, এ আইনের বিষয়ে দুই ধরনের মত এলেও বিএনপি ভারতের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করবে। এখন থেকে ভারতের যেকোনো কর্মকাণ্ড তারা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাঝপথে বিএনপি হঠাত্ ভারতবিরোধী অবস্থান নিতে থাকে। সম্প্রতি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি ভারতের কঠোর সমালোচনা করেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনার আয়োজন করা হবে। দলের অন্যতম সহযোগী সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রস্তুতি নিতে পারলে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ’ করতে পারে দলটি।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটি দেশের নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করে। এ নিয়ে পরে বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে। তাতে বিএনপি অভিযোগ করেছে, সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক সরকার হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম নিম্নমুখী হলেও নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাজারে সব নিত্যপণ্যের দর অস্বাভাবিক, টালমাটাল। সামগ্রিকভাবে সরকারি দলের অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ভোক্তাদের জীবন চরমভাবে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, এই সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক, লুটেরা ও প্রতারক ডামি সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে জনগণকেই এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।