ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন গাইবান্ধার নিশীথ প্রমাণিক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিশীথ প্রামাণিক। তার প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবরে আনন্দের বন্যা বইছে তার পৈতৃক বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ভেলাকোপা গ্রামের বাড়িতে। নিশীথের এমন অর্জনে চাচা-জ্যাঠাসহ পরিবারের সবার মুখে বইছে হাসির ঝিলিক। একে-অপরকে মিষ্টি খাইয়ে করছেন আনন্দ-উল্লাসও। তাকে প্রতিমন্ত্রী করার ঘোষণা গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার পর থেকেই বিষয়টি আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে জেলাজুড়ে।

এদিকে পরিবার ছাড়াও আনন্দিত তার সম্প্রদায়ের মানুষসহ এলাকাবাসী। সাংসদ থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় নিশীথ প্রামাণিকসহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সুধিমহলসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এর আগে মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমালোচনা ঠেকাতে মন্ত্রিসভায় রদবদল এনেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই সঙ্গে দেশটির স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১২ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া নতুন করে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন কমপক্ষে তিন ডজন। গত ৭ জুলাই সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে নবগঠিত মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন নিশীথ প্রামাণিক।

শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে নিশীথ প্রামাণিকের পৈতৃক গ্রামের বাড়ি ভেলাকোপায় গিয়ে কথা হয় তার স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে। বাড়িতে তার চাচা, জ্যাঠা ও চাচাতো ভাইসহ পরিবারের লোকজন জানান, সর্বশেষ ২০১৮ সালে ঢাকায় আসেন নিশীথ প্রামাণিক। তখন গ্রামের বাড়ি ভেলাকোপায় বেড়াতে এসেছিলেন। ভারতে অবস্থান করলেও নিশীথ আমাদের পরিবারের সন্তান। তার প্রতিমন্ত্রী হওয়ার অর্জনে পরিবার ছাড়াও গ্রামের মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।

নিশীথের জ্যাঠা দক্ষিণা রঞ্জণ প্রামাণিক বলেন, তার ভাই বিধুভূষণ প্রামাণিক দেশভাগের আগে ভারতের কোচবিহারে পাড়ি জমান। এরপর সেখানে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। নিশীথ প্রামাণিক বিধুভূষণের একমাত্র সন্তান। সাংসদ থেকে এবার তিনি মোদি সরকারের নবগঠিত মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তার এই অর্জনে পরিবার ছাড়াও গ্রামবাসীর মধ্যে বইছে খুশির বন্যা। এই খবরে গ্রামে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করছেন।

তিনি আরও বলেন, নিশীথ প্রামাণিক সর্বশেষ ২০১৮ সালে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ভেলাকোপায় এসেছিলেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে ঢাকায় এসেছিলেন নিশীথ। সেখান থেকে নড়াইল জেলায় প্রোগ্রাম শেষ করে ঢাকার গুলশানে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।

জ্যাঠাতো ভাই সঞ্জিত কুমার প্রামাণিক জানান, ভারতে লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতার চাকরি নেন নিশীথ। কিন্তু কিছুদিন পরেই শিক্ষাকতা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। জনপ্রিয়তার কারণে প্রথমে ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলার যুব সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। এরপর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। রাজনৈতিক জীবনে হোঁচট খেলেও তিনি বিপুল ভোটে কোচবিহারের সাংসদ (এমপি) নির্বাচিত হন।

তিনি আরও জানান, ২০২১ সালে বিধানসভার ভোটে এমএলএ নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বিধানসভার পদ ছেড়ে দিয়ে লোকসভা রাখেন। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিতসহ শপথ নিয়েছেন তিনি। ছোট ভাই নিশীথ প্রামাণিক প্রতিমন্ত্রিত্ব লাভ করায় শুধু খুশিই নয়, পরিবার তথা গ্রামজুড়েই সবাই গর্বিত।

ভেলাকুপা গ্রামের মোতাহার হোসেন ও আনোয়ার হোসেন বলেন, নিশীথ প্রামাণিক ভারতের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ায় আমরা গ্রামের মানুষরা আনন্দিত। আমরা মনে করি, নিশীথ প্রামাণিক তার যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার মূল্যায়ন পেয়েছেন। গ্রামের নগণ্য ছেলে নিশীথের এই অর্জনে মানুষজন শুধু খুশিই নয়, তিনি এমন স্বীকৃতি পাবেন, এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

ছোটবেলা থেকেই মেধা, মনন আর আত্মবিশ্বাসের কারণে নিশীথ প্রামাণিক একদিন যে ভালো কিছু অর্জন করবেন, তা জানা ছিল স্থানীয় অনেকের। আজ অল্প সময়ে তার নেতৃত্বের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে। আজ নিশীথ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। ভবিষ্যতে তার নেতৃত্ব আরও উচ্চপর্যায়ে যাবে বলেও বিশ্বাস করেন হরিরামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. জরিদুল হক।