ভারত কেন চীন সীমান্তে দীর্ঘতম সেতু বানাল?

ভারত বিতর্কিত অরুণাচল ও উত্তর-পূর্ব আসামকে সংযোগকারী লোহিত নদীর ওপর ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢোলা সাদিয়া সেতুর উদ্বোধন করেছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতার তিন বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার এ সেতুর উদ্বোধন করেন।

ঢোলা সাদিয়া সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৯৩৮ কোটি রুপি (এক হাজার ১৮০ কোটি টাকা)।

চীন বরাবরই অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। তারা একে দক্ষিণ তিব্বত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। সম্প্রতি তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাইলামার ভারতে সফর এবং অরুণাচলে সামরিক কাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে চীন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।

তবে ভারতও বরাবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে অরুণাচলকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেদের করে রাখতে মরিয়া।

ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, ‘চীন দিনে দিনে অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। তাই আমরা আমাদের ভূখণ্ড রক্ষায় ভৌত অবকাঠামো শক্তিশালী করছি।’

কিরেন রিজিজু আরো বলেন, ‘অরুণাচল রাজ্য ভারতেরই অংশ। এ বাস্তবতা এখনো বদলায়নি। কে এটা পছন্দ করল আর কে করল না, তাতে কী আসে যায়।’

সেতুর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘এটা সত্যিই একটা কঠিন কাজ ছিল। এখানে নানা প্রকৌশলগত সমস্যা ছিল। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এর কাজ ও গতি ছিল কিছুটা মন্থর। যাই হোক, তারপরও এটা সঠিক সময়ে শেষ করা গেছে।’

সেতুর এক প্রান্তে ভারত দুই লেনের ট্রান্স-অরুণাচল মহাসড়ক নির্মাণ করছে। অন্য প্রান্তে বিশ্বযুদ্ধকালীন ভিনটেজ সড়ক সংস্কার এবং ভবিষ্যতে এই সড়ককে আরো বিস্তৃত করার ইচ্ছে আছে ভারতের।

অন্য একটি প্রকল্পে ভারী মালামাল পরিবহনকারী বিমান অবতরণের জন্য উচ্চতর অবতরণ ভূমি তৈরি করা হবে। এটা ভারতের প্রত্যাশিত কৌশলগত বিমান পরিবহন সক্ষমতারও উন্নতি ঘটাবে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল গগন জিৎ সিং বলেন, ‘সেনাদের আসা-যাওয়ার জন্য আমাদের এ ধরনের অবকাঠামো দরকার। যদি আমরা চীনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই, এ সেতুটা বেশ কাজে দেবে।’

সামরিক বাহিনীর এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ভারত কয়েক দশক ধরে অরুণাচলের ভৌত কাঠামোর কোনো উন্নতি করেনি। ১৯৬২-এর যুদ্ধের পর অনেকে বোকার মতো বিশ্বাস করত, চায়না ভবিষ্যতে এ‌ রাস্তা ধরে ফের আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে আমরা ঠিক পথে আছি।’

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং চীনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা রক্ষায় এ রাজ্যের ভৌত কাঠামোর উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। কিন্তু সম্মানের সঙ্গে শান্তি। আমাদের দুর্বলভাবে এমন যে কাউকে মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা দরকার।’

একজন সামরিক প্রকৌশলী সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘ঢোলা সাদিয়া সেতু ৬০ টন ওজনের যুদ্ধট্যাঙ্ক বহন করতে সক্ষম।’

স্থানীয় বাসিন্দারাও এটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। স্থানীয় বাসিন্দা গুঞ্জন সাহারিয়া বলেন, ‘সাত নদীর মোহনাকে কোনো সেতু অতিক্রম করেছে, সত্যিই এটা অকল্পনীয়। এর মধ্যে আবার শক্তিশালী ব্রহ্মপুত্রও আছে।’

আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সান্ন্যাল বলেন, ‘আমি ওয়াদা করলাম, এটা শুধু কোনো সামরিক বিষয় হবে না। অরুণাচল ও আসামের প্রান্তিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ সেতু সহায়তা করবে। এটা পর্যটকদেরও আকর্ষণ করবে।’