ভিকারুননিসা স্কুল : শিক্ষকদের পক্ষে-বিপক্ষে যত বিতর্ক

ভিকারুননিসা স্কুলে শিক্ষকের কাছে অভিভাবক ‘অপমানিত’ হওয়ার পর একজন ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘিরে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে।

একদিকে স্কুলটির শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা দায়ীদের শাস্তি এবং শিক্ষকদের ‘খারাপ আচরণ’ বন্ধের জন্য দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন।

অন্যদিকে প্রাক্তন ছাত্রীরা সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষকদের পক্ষে এবং বিপক্ষে মতামত দিচ্ছে ।

ভিকারুননিসার অনেক সাবেক শিক্ষার্থী তাদের পুরনো অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

নাফিসা তালুকদার লিখেছেন তার একটি ‘তিক্ত অভিজ্ঞতার’ কথা।

” অসুস্থতার জন্য একদিন আমি একদিন ক্লাসে ছিলাম ন। পরে আমার শ্রেণী শিক্ষক আমাকে ডেকে অভিযোগ করেন যে, ওই দিন আমি ছেলে বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটিয়েছি।

”কিন্তু আমার তখন কোন ছেলে বন্ধু ছিল না, আমি জানিও না আগের দিন কী হয়েছে। পরে তিনি আমার মাকে ডেকে পাঠান,” মিস তালুকদার লিখেছেন।

কেউ কেই মনে করেন রাজনৈতিক কারণে শিক্ষক নিয়োগ দেয়াই দায়ী। যেমন লিখেছেন ফারাহ ফাহমিদা।

”হামিদা আলী আপা ছিলেন স্কুলের সবচেয়ে ভালো অধ্যক্ষ। যারা যোগ্যতা ছাড়া শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে স্কুলের প্রধান হয়, তাদের কাছ থেকে আর কি ভালো আশা করা যায়?”

‘শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়’

বেসরকারি ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজটি পরিচালিত হয় একটি গভর্নিং বডির মাধ্যমে। যেকোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে এই বডির সদস্যদের ব্যবস্থা নেয়ার কথা।

গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা বলছেন, সবমিলিয়ে ৭০০ শিক্ষক রয়েছে।

”তাদের মধ্যে দুই একজনের হয়তো কখনো আচরণে সমস্যা থাকতে পারে বা সমস্যা হয়ে যায়। এরকম তো যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে.” তিনি বলেন।

” কিন্তু যদি কখনো লিখিতভাবে বা মৌখিক বা টেলিফোনের মাধ্যমে শাখা প্রধান বা প্রিন্সিপালের কাছে এরকম অভিযোগ আসে, ওই শিক্ষককে সতর্ক করে দেয়া হয়। এমনকি চিঠি দিয়েও বলে দেয়া হয় যে, আপনাদের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের অভিযোগ আছে, আপনারা সতর্ক থাকবেন,” তিনি বলেন।

বুধবার বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ঘটনায় স্কুলটির যে তিনজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গভর্নিং বডিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শিক্ষকদের পক্ষে অভিমত

তবে সব মন্তব্যই শিক্ষক বা স্কুলের বিরুদ্ধে না। অনেকেই মনে করেন নেতিবাচক মন্তব্যগুলোর সাথে তাদের অভিজ্ঞতা মিলছে না।

এই স্কুল ও কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ইফফাত গিয়াস আরেফিন। নব্বুইয়ের দশকে তিনি টানা ১২ বছর এখানে পড়েছেন।

”এখন যে ঘটনা ঘটেছে, যা শুনছি, আমি কোনোভাবেই মিল খুঁজে পাই না। আমাদের সময় শিক্ষকরা অনেক সহায়তা করতেন। বয়ঃসন্ধির সময় বাচ্চাদের অনেক পরিবর্তন হয়। ওই সময় শিক্ষকরা আমাদের ব্যক্তিগতভাবে অনেক সময় দিতেন।

”আমরা খারাপ কোন অভিজ্ঞতাও হয়নি বা বন্ধুদের কাছেও শুনিনি যে, তাদের অপমান করে কথা বলা হয়েছে,” মিস আরেফিন বলেন।

”অন্যায় করলে অবশ্যই শাসন করা হবে। আমাদেরও শাসন করা হতো, কিন্তু শিক্ষকদের প্রতি সম্মানটা কিন্তু কমে যায়নি,” তিনি বলেন

তবে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার শিক্ষার্থীরাও বলছেন, সব শিক্ষক তাদের সঙ্গে বা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে এরকম আচরণ করেননি। কোনো কোনো শিক্ষকের কাছ থেকেই তারা এরকম অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন।

অভিভাবকরা কী করেন?

অভিভাবকরা বলছেন, অনেক সময় খারাপ আচরণের শিকার হওয়ার পরেও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা সেগুলো হজম করে যান।

শাহনাজ পারভীন নামের একজন অভিভাবক বিবিসিকে বলছেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে এখানে ভর্তি করিয়েছি। অনেক সময় সে খারাপ আচরণের কথা বলে। কিন্তু আমরা বলি, মা, কষ্ট করে মেনে নাও।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বিবিসিকে বলছেন, এমন ধরণের কথাবার্তা বলা হয়, যে মেয়েরা মাঝেমাঝেই স্কুলে যেতে চায়না। কিন্তু এ নিয়ে তারা কোন অভিযোগও করেননি, কারণ তাদের আশঙ্কা, এ নিয়ে অভিযোগ করলে তাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে ক্ষতি পারে।

অভিযোগ বক্স নামে একটি জিনিসের কথা তারা শুনলেও, স্কুল-কলেজে কখনো সেটি খুঁজে পাননি বলে জানান।