ভয়ংকর স্বপ্নের মধ্যে কেটেছে গত ১২টি বছর, তিনবার তিন তালাকের শিকার

দুঃস্বপ্নের মধ্যে কেটেছে গত ১২টি বছর। আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই। চোখের জল মুছতে মুছতে মাত্র এই কয়েকটি শব্দের মাধ্যমে এক অব্যক্ত যন্ত্রণার কথা জানালেন তারা খান। মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী ও পুরুষতান্ত্রিক দমননীতির প্রতীক তিন তালাক প্রথা নিয়ে যখন উত্তাল সমস্ত দেশ। তখনই ১২ বছরের বিবাহিত জীবনে তিন-তিনবার এই মধ্যযুগীয় বর্বর প্রথার শিকার হয়েছেন তারা খান। মাত্র তিনবার তালাক শব্দ উচ্চরণ করে একটি নারীর জীবন থেকে সব স্বপ্ন কেড়ে নেওয়ার অধিকার দিয়েছে এই প্রথা। নিজের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে বারবার চোখে জল চলে আসছিল উত্তরপ্রদেশের বারেলির বাসিন্দা তারা খানের। তাঁর প্রথন বিবাহ হয় জাহিদ খান নামের ওই এলাকারই এক ব্যক্তির সঙ্গে। ৭ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পরও তাঁদের সন্তান না হওয়ায় তিন তালাক প্রথার মাধ্যমে তারার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন তাঁর স্বামী।

প্রথমটায় ভেঙে পড়লেও আত্মীয়দের চেষ্টায় ঘুনসা গ্রামের পাপ্পু খান নামের আরেক ব্যক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় বার ঘর বাঁধেন তারা। তিনি জানিয়েছেন, পাপ্পুর সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্কে তাঁকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। একদিন না পেরে প্রতিবাদ করায় তাঁকে তালাক দেয় তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। দ্বিতীয় বার তালাকের পর মানসিক ভাবে ভেঙে পরেন তারা। চলে আসেন মামার সংসারে। তবে ফের আত্মীয়দের চাপে তাঁকে সনু নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। তবে নিয়তির পরিহাস, বিয়ের কয়েক দিন পর থেকেই তাঁকে মারধর করা শুরু করে সনু। তার জেরেই চার মাসের মাথায় তারাকে ফের তিন তালাক প্রথার মাধ্যমে তালাক দেয় সনু।

তিন-তিনবার তালাকের পর আর বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না তারা। তবে এবারও আত্মীয়দের চাপে তিনি বিয়ে করলেন সামসাদ নামের এক ব্যক্তিকে। কিন্তু এবারও সুখের হয়নি তাঁর সংসার। বাকিদের মতোই তাঁর চতুর্থ স্বামীও তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তারা। তিনি জানিয়েছেন, এই সম্পর্কও ভেঙে গেলে তাঁর আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না। ইতিমধ্যে তার ভাইয়েরা জানিয়ে দিয়েছেন তাদের সংসারে ঠাই হবে না তারার। এবারও যদি তাকে তিন তালাকের শিকার হতে হয় তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের শরণাপন্ন হবেন তিনি বলেও জানিয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, তিন তালাক নিয়ে সরব হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি৷ সম্প্রতি নয়া দিল্লির বাসব সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা বলেন তিনি৷ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে প্রধানমন্ত্রী আবেদন করেন, তিন তালাকের মতো বিষয়টিকে রাজনীতির বাইরে রাখুন৷ তাঁদের এগিয়ে এসে এই সমস্যার সমাধান করার আর্জি জানান তিনি৷