মুসলিমপ্রধান আসনেও সাফল্য পেয়েছে বিজেপি!

ভারতে যে সব লোকসভা আসনে মুসলিম জনসংখ্যা অনেকটাই বেশি (৪০%-এরও উপরে), ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের মতো এ বারও সেই সব জায়গায় মুসলিমরা কিন্তু একজোট হয়ে বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট দেননি। বরং সেই সব কেন্দ্রে হিন্দুরা অনেক বেশি একজোট হয়ে বিজেপির ভোটের ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছেন। ফলে, ওই সব আসনেও বিজেপিকে হতাশ হতে হয়নি। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এমন ২৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২০১৪-তে বিজেপি জিতেছিল ৭টিতে। অতগুলি আসন মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে, এমন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিও পায়নি, পাঁচ বছর আগে। এবার ওই ২৯টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৫টিতে। গত বারের জেতা দুটি আসন শুধু খুইয়েছে উত্তরপ্রদেশে, সপা, বসপা জোটের কাছে।

পরিসংখ্যান দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪-র মতো এবারও ওই কেন্দ্রগুলিতে জয়ী বিজেপি প্রার্থীদের কেউই মুসলিম নন। শুধু তাই নয়, যে সব লোকসভা আসনে মুসলিম জনসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে, সেই ৬৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৯টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ছবিটা একই রকম ছিল গত লোকসভা ভোটেও।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মুসলিম প্রধান কেন্দ্রগুলিতে মুসলিমরা জোট বেঁধে অন্য সম্প্রদায়ের প্রার্থী বা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, এমনটা নয়। ২০১৪ সালেও তেমনটা হয়নি। বরং মুসলিম প্রধান ওই লোকসভা আসনগুলিতে হিন্দু ভোট অনেক বেশি একজোট হয়ে বিজেপি প্রার্থীদের ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছিল গত লোকসভা নির্বাচনেও।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মুসলিম ভোট বিজেপি প্রার্থীদের ভোট-বাক্সে পড়ে না বলে যে ধারণা রয়েছে আমজনতার, তা ঠিক নয়। এর আগেও অনেক গবেষণা দেখিয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত আসনগুলিতে মুসলিমরা কখনোই জোট বেঁধে নির্দ্বিধায় কোনও দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দেন না। তাঁরা ভোট দেন নিজেদের পছন্দ মতো।

পরিস্থিতি, প্রার্থীর গুণাগুণ বিচার করে। বস্তুত, স্বাধীনতার পর থেকে এটাই হয়ে আসছে। মুসলিমরা যদি একজোট হয়ে কোনও প্রার্থী বা বিশেষ কোনও দলকে ভোট দিতেন, তা হলে সংসদে মুসলিম সাংসদের সংখ্যা ৫০-এর কিছু বেশিতে আটকে থাকত না। তবে এটাও ঠিক, স্বাধীনতার পর থেকে যে কজন মুসলিম সাংসদ হয়েছেন এখনও পর্যন্ত, তাঁরা সকলেই নির্বাচিত হয়েছেন মুসলিম প্রধান ওই ২৯টি লোকসভা আসন থেকেই।

বৃহস্পতিবার লোকসভা ভোটের ফলাফল বেরনোর পর দেখা যাচ্ছে, মুসলিম প্রধান লোকসভা আসনগুলিতে বিজেপি প্রার্থীরাও মুসলিমদের ভোট পেয়েছেন। আর ওই আসনগুলিতে হিন্দু ভোট আরও বেশি একজোট হয়েছে বিজেপির পক্ষে।

সাম্প্রতিক জনগণনা ও নির্বাচন কমিশনের তথ্যাদি জানাচ্ছে, দেশের ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে এমন ২৯টি আসন রয়েছে, যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা ৪০ শতাংশেরও বেশি। সেই ২৯টি আসনের মধ্যে ২৭টিই রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, আসাম, কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গে। বাকি দুটির একটি- লক্ষদ্বীপ। অন্যটি তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ।

নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই ২৯টি আসনের মধ্যে গত লোকসভা ভোটে ৭টি জিতেছিল বিজেপি। অন্য সবকটি দলের চেয়ে বেশি। যাদের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়, সেই ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির কেউই বিজেপির মতো অত বেশি মুসলিম প্রধান আসনে জিততে পারেনি। ২৯টির মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি। বাকি ১৬টি আসন ভাগাভাগি হয়েছিল অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি দলগুলির মধ্যে। ৭টির মধ্যে বিজেপি ৫টিই জিতেছিল উত্তরপ্রদেশে, যেখানে ২০১৪-য় ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭১টি পেয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল।

উত্তরপ্রদেশের সমীকরণ কিছুটা বদলালেও, সেই পরিসংখ্যানের খুব একটা হেলদোল হয়নি, এ বারও। মুসলিম প্রধান ওই ২৯টি আসনের মধ্যে ‘হিন্দুবাদী’ পার্টি বিজেপি জিতেছে ৫টি আসনে। দুটি আসন খুইয়েছে উত্তরপ্রদেশেই, বসপা-সপা জোটের কাছে। এটাই প্রমাণ করছে, মুসলিমরা ওই আসনগুলিতে বিজেপি প্রার্থীদের একেবারে বর্জন করেছেন, তা নয়। বরং মুসলিমদের একাংশ ওই সব আসনে অ-মুসলিম বিজেপি প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। তবে বিজেপি এ বার ৬ জন মুসলিমকে ভোটে প্রার্থী করেছিল, তাঁদের এক জনও জয়ী হননি। যদিও এবার সাংসদে মুসলিম সাংসদের সংখ্যা বেড়ে ২৬ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা এও জানাচ্ছেন, জনসংখ্যার নিরিখে মুসলিমরা যে সব লোকসভা আসনে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ (৪৮টি আসন) এবং ৩০ থেকে ৪০ (১৯টি আসন) শতাংশের মধ্যে, এমন ৬৭টি কেন্দ্রে বিজেপির পারফরম্যান্স ২০১৪-য় যা ছিল, এ বারও সেটাই রয়ে গিয়েছে। ওই ৬৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৯টিতে জিতেছে বিজেপি। ২০১৪-তেও তাই ছিল। তবে ওই আসনগুলিতে বিজেপি প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান বেড়েছে। যা প্রমাণ করছে, ওই আসনগুলিতে হিন্দু ভোট আগের চেয়ে আরও বেশি একজোট হয়েছে বিজেপির পক্ষে।