মোদিও ‘প্রণাম’ করেন ধর্ষক ধর্মগুরু রাম রহিম সিংকে

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর স্বচ্ছ ভারতের ডাক দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিং। অার তাতেই একেবারে গলে যান নরেন্দ্র মোদি। প্রকাশ্যে ডেরা সাচ্চা সৌদার গুরমিত রাম রহিম সিংকে ‘প্রণাম’ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ‘মনের ভাষা’ বুঝতে পেরে বিজেপির বড় বড় নেতাও ছুটে যান রাম রহিমের ডেরায়। কারণ, রাম রহিম শুধু একজন ধর্মগুরু নন, তার বিশালসংখ্যক ভক্তকুল বিজেপির যে একটি বড় ভোটব্যাংক হতে পারে, সেটাও আন্দাজ করতে পেরেছিলেন তারা।

ফল হলো হাতেনাতে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের বদলে বিজেপিকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করলেন রাম রহিম। রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় আসল বিজেপি।

গত শুক্রবার সেই বিতর্কিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিংকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে হরিয়ানার একটি আদালত। তবে চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার।

তার আগেই রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জেরে তার সমর্থকদের তাণ্ডবে ৩১ জনের প্রাণহানির পরে কাঠগড়ায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর।

খট্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিস্থিতি সামলাতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় তিনি যে খুশি নন, তা নীরবে বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদিও।

মোদি টুইট করে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টা নিরলস কাজ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। আগামীকাল বেলা ১১টায় নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, খট্টরকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী খুব একটা ইচ্ছুক ছিলেন না। তাকে সরানোর জন্য চাপও বাড়ছে বিজেপির ভিতরে।

অবস্থা বুঝে আসরে নেমেছে বিরোধীরাও। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধি ‘হরিয়ানার আইন শৃঙ্খলাহীনতা’ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। শান্তি বজায়ের আবেদন জানিয়েছেন সোনিয়া।

বিরোধীদের অভিযোগ, পরিস্থিতি যে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে, সেটা তো আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। তাহলে আগে থেকেই কেন ব্যবস্থা নিল না সরকার? কেন ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও দুইশ গাড়ির বহর নিয়ে হরিয়ানার সিরসা থেকে পঞ্চকুলার আদালত পর্যন্ত আসতে দেয়া হলো রাম রহিমকে? কেন জড়ো হতে দেয়া হলো তার ভক্তদের?

অনেকের মতে, সবকিছুই ভোটের টানে। বছর দুয়েকের মাথায় ফের হরিয়ানায় ভোট। তার আগে লোকসভা নির্বাচন। তারও আগে হিমাচল, রাজস্থানে ভোট। সর্বত্রই রাম রহিমের দলিত ভক্তদের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে বিজেপি।

এই জল্পনার সমর্থন মিলেছে নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরের ছবি দেখে। সেখানে কানাকানি হচ্ছে, সিবিআই আদালত দোষী সাব্যস্ত করলেও কী করে রাম রহিমের দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে দিল্লিতে খ্যাতিমান আইনজীবীদের সঙ্গে কথা সেরে রেখেছে বিজেপি। তার ভক্তরা যাতে বিজেপির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে না নেন, সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা হয়েছে।

এ তো পর্দার আড়ালের ঘটনা। শুক্রবার রাতে একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ। তার প্রশ্ন, ‘কে ঠিক, কোটি কোটি মানুষ যাকে ভগবান বলে মনে করেন, সেই রাম রহিম? না তার মত মহান আত্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সেই মেয়েটি?

সাক্ষী মহারাজের এই বক্তব্যের পাশে দাঁড়াচ্ছে না বিজেপি। আবার সাচ্চা সৌদার ওপর খড়্গহস্তও হতে পারছে না। কেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেল, দিল্লির নেতাদের কাছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে খট্টর বলেছেন, অনেক লোককে আটকানো হলেও বহু লোক আগে থেকেই পরিচয় গোপন করে অস্ত্র হাতে শহরে ছিল।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হতে পারত। তাছাড়া সিরসা-পঞ্চকুলার রাস্তা তিন দিন ধরে বন্ধ করে দেয়া সম্ভব ছিল না। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসারও দাবি করেন তিনি।

খট্টরের যুক্তি উড়িয়ে বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, পঞ্চকুলায় জমায়েত হওয়া রাম রহিমের ভক্তদের নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরের কথা, উল্টো গত কাল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রামবিলাস শর্মা বলেন, ‘ওই ভক্তরা সাধারণ, শান্তিপ্রিয় নাগরিক। ওরা পঞ্চকুলায় এসেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও একটা গাছের গায়েও হাত দেয়নি।’

বিরোধীদের অভিযোগ, এর থেকেই স্পষ্ট যে, ভোটের ভাবনায় কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ইচ্ছাই ছিল না খট্টর সরকারের। ফলে যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে; হচ্ছেও। আনন্দবাজার।