যশোরের ‘সবজি গ্রাম’ হায়াতপুরের মাঠে মাঠে শীতের আগাম শিম চাষ

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের সবজি প্রসিদ্ধ গ্রাম হায়াতপুরের মাঠে মাঠে এখনই চোখে পড়ে শীতের সবজি শিম। ভাল দাম পাবার আশায় এই গ্রামের বহু কৃষক এবার আগাম চাষ করেছে শীতের সবজি শিম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নিরাপদ সবজি জোন খ্যাত রাজগঞ্জের মশ্বিমনগর ইউনিয়নের হায়াতপুরসহ তৎপাশবর্ত্তী শাহপুর, শয়লা, রামপুর, হাজরাকাটি, পারখাজুরা, নোয়ালী, ভরতপুর, চাকলা, কাঠালতলা ও আশপাশের গ্রামের বহু কৃষক শীতের সবজি শিমের আগাম আবাদ করেছে। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছে হায়াতপুর গ্রামের কৃষকেরা।

এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবি। এই কৃষিজীবিদের প্রায় সকলেই সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাইতো হায়াতপুর গ্রামের মাঠ জুড়ে চাষীরা চাষ করেছেন শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। সে কারণে ওই গ্রামটি মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের সবজি চাষের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ।

অতিসম্প্রতি সরেজমিন হায়াতপুর গ্রামে গিয়ে কয়েকজন চাষীর সাথে কথা হয়। ওই গ্রামের শিম চাষী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাধারনতঃ জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম থেকে শিম চাষ শুরু হয়। বীজ রোপনের দেড়-দু’মাসের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। আগে-ভাগে চাষ করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। আমি ৮০ শতক জমিতে হাইব্রিড লালফুল জাতের শিম চাষ করেছি। শিম ক্ষেতে বেড করে ধঞ্চে (কাঠ শোলা) গাছ লাগিয়েছি। শিম গাছ লতানোর একপর্যায়ে ধঞ্চে গাছের ডগা ছেটে দিয়েছি। এখন ধঞ্চে গাছের উপর দিয়ে শিম গাছের লতাপাতা বেয়ে ক্ষেত ভরে গেছে।

কোন প্রকার মাচা ছাড়াই খুব কম খরচে ধঞ্চে গাছের উপর শিমের আবাদে কৃষকেরা বেশি লাভবান হয়ে থাকে। খরচ কম লাভ বেশি, সে কারণে আস্তে আস্তে এলাকায় আগাম শিম চাষের দিকে কৃষকেরা বেশি ঝুঁকছে। তিনি আরও জানান, গত বছর ৪০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে সব মিলিয়ে আমার ১২ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছিলো। খরচ বাদে প্রায় ৫০ হাজার টাকা শিম বিক্রি করেছিলাম। গত বছর আগাম শিম লাগিয়ে ভাল দাম পেয়েছিলাম। তাই এবার ৮০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। আর ১৫/২০ দিন গেলেই বাজারে বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন। গত বছরের প্রথম দিকে কেজি প্রতি ১২০ টাকা হারে বিক্রি করেছিলাম। এখন বাজারে সবজির দাম বেশ চড়া। এবারও ভাল দামে শিম বিক্রি করা যাবে বলে মনে করছি। শিম চাষী আমির আলী বলেন, আমরা বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করে থাকি। সাধারনতঃ আমাদের এলাকায় ইন্ডিয়ান হাইব্রিড লালফুল, আইরেট, কাকরেশ ও স্থানীয় বেগম জাতের শিম চাষ করা হয়।

শিম চাষী আমির আলী আরও বলেন, আমি একজন প্রান্তিক চাষী। অন্যের জমি লীজ নিয়ে ৩০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। শিমের চাষ একটি লাভজনক সবজির চাষ। এই শিমের আবাদ করেই আমার সংসার চলে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় অধিকাংশ কৃষিজীবি মানুষ শিম চাষের সাথে জড়িত। হায়াতপুর-শাহপুর এলাকাটিকে অনেকেই সবজির চাষের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে জানে। তেমনি অনেকেই শিম পল্লী হিসেবেই চেনে। এলাকার সবজি চাষীদের বিশেষ করে যারা প্রান্তিক চাষী তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারলে সবজি’র উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দেশের সবজির চাহিদা পূরণে এ এলাকার চাষীরা বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। শিমের আবাদের পাশাপাশি বেগুন, পটল, করল্লা, বাঁধা কপি, ফুলকপি, মূলা, পালংশাক, গোলআলু, পেপে, মানকচু, ওলকচু, মুখি কচু, মেটে আলু, বরবটি, ঢেঁড়শ, মিষ্টি আলু, ঝিঙা, চিচিংগাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি এ গ্রামের কৃষকরা চাষ করে থাকেন। এ কারণে রাজগঞ্জের হায়াতপুর গ্রামকে অনেকেই সবজি খ্যাত গ্রাম হিসেবেও চেনে।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, ভিটামিন ও খনিজ লবন সমৃদ্ধ শিম একটি জনপ্রিয় সবজি। মশ্বিমনগর ইউনিয়নের হায়াতপুর, শাহপুরসহ এ অঞ্চলের মাটি, জলবায়ূ ও পরিবেশ শিম চাষের জন্য উপযোগী। তাছাড়া আগাম শীতের সবজি শিম চাষ করে কৃষকেরা বেশ লাভবান হওয়ায় বহু কৃষক শিম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আগ্রহী কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরী সহায়তা দিয়ে শিম চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
এসব কৃষকদের শিম ক্ষেত যথারিতি তদারকি উপজেলা কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা করে আসছেন বলে তিনি জানান।