যাত্রীদের জীবন বাঁচিয়ে পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ এখন হিরো

এক দুইজন নয়। অন্তত ২০ থেকে ২২ জন যাত্রীর জীবন বাঁঁচিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানির নিচ থেকে তাদের উদ্ধার করেছেন। তার এই কাজের জন্য জেলা পুলিশ সুপার ও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক স্কুল থেকে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকে তার পদোন্নতির ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ কাজের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছেন। অনেকেই তাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তিনি হলেন হাইওয়ে পুলিশ কনস্টবল পারভেজ।

জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ১১টার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী ডোবায় পড়ে যায় ঢাকা থেকে মতলবগামী অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে মতলব এক্সপ্রেস বাসটি। উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন, তখন গৌরীপুরে দায়িত্বরত দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া মহানায়কের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা ডোবার পানিতে তাৎক্ষণিক লাফিয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে দ্রুত গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন। এতে করে সহজে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারেন।

গ্লাস ভেঙে দ্রুত পানির নিচে গাড়ির ভেতর গিয়ে বের করে আনেন সাত মাসের এক শিশুকে। গাড়ির ভেতর আটকা পড়া পাঁচ নারীসহ ২০ থেকে ২২জন যাত্রীকে উদ্ধার করেন তিনি নিজেই।

পরবর্তীতে স্থানীয় মানুষ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। সংবাদ পেয়ে একে একে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিসসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, ‌‘গাড়িটি ডোবায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ মিয়া দ্রুত লাফিয়ে পড়েন পানিতে। তিনি প্রথমে গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন যাতে করে ভেতরে আটকা পড়া যাত্রীরা সহজে বের হতে পারে। তাতে তিনি থেমে থাকেননি। পানির নিচে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনেন সুস্থ সবল সাত মাসের এক শিশুকে। তার বুদ্ধিবলে রক্ষা পায় বহু প্রাণ।’

স্থানীয়রা জানায়, দুর্ঘটনার সঙ্গেসঙ্গে যেভাবে পারভেজ ঝাপিয়ে পড়ে যাত্রীদের উদ্ধার করেন তা অবিশ্বাস্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে ডুবে তাৎক্ষণিক যাত্রীদের উদ্ধারের ফলে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। পারভেজের এ বীরত্বের জন্য উপস্থিত হাজারো মানুষ তাকে তথা পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন মোবাইল ক্যামেরায় পারভেজের ছবি তুলতে।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে পারভেজের বীরত্বপূর্ণ কাজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ফেসবুকে অনেকেই পারভেজের এ কাজের জন্য তার পদোন্নতি, কেউবা আগামী পুলিশ সপ্তাহে তার পিপিএম পুরস্কারের দাবি জানান।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কনস্টেবল পারভেজ মিয়ার এ কর্মতৎপরতায় গর্বিত হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়ন। তার সাহসিকতায় কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ ১০ হাজার টাকা, স্থানীয় পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাঁচ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ জানান, যাত্রীদের জীবন বাচাতে আমাদের পারভেজ ঝুঁকি নিয়ে যা করেছে তা হাইওয়ে পুলিশ বিভাগের জন্য সত্যই প্রশংসনীয়। পুরস্কার দিয়ে কাজের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তবুও এ কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি যাতে তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পান এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে।