যাদের টপকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম

ফের আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম।
মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ২৬তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে সে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে তাকরিমের নাম ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই প্রতিযোগিতায় চূড়ান্তভাবে সর্বমোট নয়জন বিজয়ীকে টপকে ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ হয়েছে তাকরিম।

চূড়ান্ত পর্বে হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম ছাড়াও আরো যারা পুরস্কৃত হয়েছে, তারা হলো- ইথিওপিয়ার আব্বাস হাদি ওমর (দ্বিতীয়), সৌদি আরবের খালেদ সুলাইমান বুরকানি (তৃতীয়), ক্যামেরুনের নুরুদ্দীন ও ইন্দোনেশিয়ার হাদি মাওলানা (চতুর্থ), কেনিয়ার আব্দুল আলিম আব্দুর রহিম মোহাম্মদ হাজি (ষষ্ঠ), সিরিয়ার মোহাম্মদ হাজ আসআদ ও ইয়ামেনের মোহাম্মদ আবদু আহমাদ কাসেম (সপ্তম) এবং ব্রুনাইয়ের আব্দুল আজিজ বিন নুর নাসরান ও মরক্কোর হামজা মুস্তাকিম (নবম)।

এর আগে, গত ১২ জানুয়ারি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক নির্বাচনী পরীক্ষায় বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তাকরিম দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হয়। এরপর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করে এই ক্ষুদে বালক। প্রতিযোগিতার মূল পর্বে নিয়ম অনুযায়ী, তেলাওয়াতের সময় একাধারে পাঁচটি প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর দেয় তাকরিম। কোনো প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে তার ভুল হয়নি। উপহার দিয়েছে স্বভাবধর্মী মুগ্ধকর তেলাওয়াত।

দুবাইয়ে এবারের প্রতিযোগিতায় শুধু তাকরিম-ই দেশের নাম উজ্জ্বল করেনি। দুবাইয়ের এই প্রতিযোগিতায় শায়খ শোয়াইব মোহাম্মদ আলআজহারি নামেও এক বাংলাদেশী আলেম বিচারক প্যানেলের সদস্য ছিলেন।

হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম শুধু এবারই নয়; এর আগে আরো অন্তত তিনটি দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছে। তাকরিমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযু ফয়জিল কুরআনের কিতাব বিভাগের শিক্ষক মাওলানা হুসাইন আহমাদ জানিয়েছেন, তাকরিম ২০২২ সালে লিবিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সপ্তম স্থান, একই বছর ইরানে অনুষ্ঠিত ৩৮তম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৪২তম বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করে। সৌদির প্রতিযোগিতায় ১১১টি দেশের ১৫৩ জন হাফেজের মাঝে তৃতীয় হওয়ায় তাকরিমকে দেশটি ১ লাখ রিয়াল পুরস্কার দেয়। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৮ লাখ টাকা।

হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী ঢাকার কিতাব বিভাগের ছাত্র এবং তার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ভাদ্রা গ্রামে। তার বাবা হাফেজ আব্দুর রহমান মাদরাসার শিক্ষক এবং মা একজন গৃহিণী।

এদিকে, তাকরিমকে নিয়ে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার শিক্ষক ও মারকাযু ফয়জিল কুরআনের পরিচালক মাওলানা মুরতজা হাসান ফয়সি মাসুম ফেসবুক পোস্টে একটি বিশেষ আবেদন করেছেন। তা এখানে তুলে ধরা হলো-

‘একটি আবেদন-
বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই ধর্ম প্রিয় কুরআন প্রিয়। সদ্য দুবাইতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী ঢাকা-এর কিতাব বিভাগের ছাত্র সালেহ আহমাদ তাকরিমের বিশ্বজয় মানে- কোটি কোটি দেশপ্রেমিক, কুরআন প্রেমিকদের জয়। বিশ্বজয়ী এ হাফেজকে বরণ করার জন্য বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ঘটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু গতকাল বঙ্গ বাজার মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার বাংলাদেশী মানুষের স্বপ্ন পুড়ে যাওয়ায়, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করত: সকল ধরনের সংবর্ধনা, শোডাউন ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার জন্য তৌহিদী জনতার প্রতি ফয়জুল কুরআন পরিবারের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনাদের কাছে প্রিয় তাকরীম, ওর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও পিতা মাতার জন্য আন্তরিক দোয়া কামনা করছি। জাযাকুমুল্লাহ।’