যুক্তরাষ্ট্রে আবারও পুলিশের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রে আবারও পুলিশের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এবার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিসে কুলোরস-এর চাচাতো ভাই কিনান অ্যান্ডারসন নিহত হয়েছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ টেজার অস্ত্র ব্যবহার করে তাঁকে কয়েক দফায় বৈদ্যুতিক শক দিয়েছিল এবং সড়কের ওপর চেপে ধরেছিল। এর কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়।

এটি ৩ জানুয়ারির ঘটনা। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি) ইতিমধ্যে বডি ক্যামেরা (পুলিশের শরীরে যুক্ত ক্যামেরা) ফুটেজ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তারা অ্যান্ডারসনকে চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দিচ্ছেন। তখন অ্যান্ডারসন ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বলে ওঠেন, ‘তাঁরা আমার অবস্থা জর্জ ফ্লয়েডের মতো করার চেষ্টা করছে।’

২০২০ সালের মে মাসে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে পুলিশ সদস্যদের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েড নিহত হন।
৩১ বছর বয়সী কিনান অ্যান্ডারসন পেশায় শিক্ষক ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় থাকতেন। অ্যান্ডারসন লস অ্যাঞ্জেলেসে কেন এসেছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
৩ জানুয়ারি একটি সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। গত বুধবার পুলিশ প্রধান মাইকেল মুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর অ্যান্ডারসন পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি আরও বলেন, অ্যান্ডারসন ঘটনাস্থল থেকে পালানোর জন্য অনুমতি ছাড়াই অন্য এক ব্যক্তির গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করছিলেন।

ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর এ কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ দূর থেকে বলছিলেন,‘আমাকে কেউ মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।’ তবে ক্যামেরা ফুটেজে এ ধরনের কোনো হুমকির দৃশ্য দেখা যায়নি। শুরুতে পুলিশের নির্দেশ মতো অ্যান্ডারসন নিচে বসে পড়েছিলেন। তবে আরও বেশিসংখ্যক পুলিশ আসার পর তিনি উঠে দাঁড়ান এবং দৌড়াতে শুরু করেন। তাঁকে থামতে বলা হলেও তিনি শোনেননি।

পুলিশ অ্যান্ডারসনের কাছে পৌঁছে তাঁকে যখন আটকে ফেলার চেষ্টা করে, তখন তিনি শুরুতে শান্ত ছিলেন, এরপর প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন, এরপর তাঁর চোখেমুখে আতঙ্ক দেখা যায়। অ্যান্ডারসন চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘দয়া করে সাহায্য করুন। তাঁরা আমার অবস্থা জর্জ ফ্লয়েডের মতো করার চেষ্টা করছে।’ এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে টেজার অস্ত্র ব্যবহার করবেন বলে সতর্ক করেন। শুরুতে অ্যান্ডারসনের ওপর প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মতো অচেতন করার অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছিল। অন্য কর্মকর্তারা তাঁকে ধরে নিচে ফেলে দেন। এরপর আরও পাঁচ সেকেন্ড টেজার অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। টেজার হলো বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অস্ত্র। কাউকে পালানো থেকে থামাতে দূর থেকে এ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

পুলিশ বলছে, টেজার ব্যবহারের পাঁচ মিনিট পর একটি অ্যাম্বুলেন্সে অ্যান্ডারসনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতায় সমস্যা দেখা দেওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। ফুটেজ প্রকাশের পর লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বিভাগের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে পুলিশের হাতে এ নিয়ে তিন কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হয়েছেন। জানুয়ারির শুরুর দিকে ৪৫ বছর বয়সী টাকার স্মিথ এবং ৩৫ বছর বয়সী অস্কার স্যানশেজ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস এসব ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন। এ তিন ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ বিভাগ।
অ্যান্ডারসনের মৃত্যুর পর মানবাধিকারকর্মীরা আবারও যুক্তরাষ্ট্র পুলিশে সংস্কার আনার দাবি তুলেছেন। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন করা উচিত নয়।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যান্ডারসনের চাচাতো ভাই প্যাট্রিসে কুলোরস গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই সাহায্য চেয়ে পায়নি। আমার ভাই নিজের জীবন নিয়ে ভীত ছিল। ১০ বছর ধরে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিরুদ্ধে গড়ে এক আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল সে। ও জানত, কোনটা তার জীবনের জন্য হুমকিমূলক। সে নিজেকে সুরক্ষার চেষ্টা করেছিল। কেউই তাকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেনি।’
কুলোরস ও অন্যরা লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বিভাগের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

পুলিশ প্রধান মাইকেল মুর বলেন, তিনি জনস্বার্থে অ্যান্ডারসনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দ্রুত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ফুটেজ প্রকাশ করতে সাধারণত ৪৫ দিন সময় লাগে।