রংপুরের পীরগঞ্জে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় সংসার ভাঙ্গতে বসেছে নববধূ লিজা’র

রংপুরের পীরগঞ্জে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় সংসার ভাঙ্গতে বসেছে নববধূ লিজা আক্তারের। বিয়ের ১ বছরও পার হয়নি, অথচ সাড়ে ৩ মাস ধরে বাবা’র বাড়িতে। স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- যৌতুকের টাকা ছাড়া এ বাড়িতে ঠাঁই হবে না তার।

নববধূ ও তার পরিবার জানায়, গত ১৬ এপ্রিল’২০২৩ ইং তারিখে উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে ২লক্ষ টাকা দেনমোহর ধায্য করে উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের অসহায় নির্মান শ্রমিক শাহজাহান মিয়া’র কন্যা লিজা আক্তারের বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের হরনাথপুর গ্রামের জিয়াউর রহমানের পুত্র মেহেদি হাসানের সঙ্গে। মেহেদি হাসান এবং তার বাবা, মা ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিক। বিয়ের ক’দিন পরেই নববধূ লিজা আক্তারকেও গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে ভর্তি করা হয়। ভালই চলছিল নবদম্পতির সংসার।

কিন্তু মাস তিনেক পেরুতে না পেরুতেই স্বামী মেহেদি হাসান, শ্বাশুড়ি মরিয়ম বেগম ও শ্বশুর জিয়াউর রহমান যৌতুকের টাকার জন্য শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে নববধু লিজা আক্তারকে। এক পর্যায়ে যৌতুকের টাকার জন্য ঢাকা থেকে বাবা’র বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় গৃহবধূ লিজাকে।

লিজার বাবা শাহজাহান মিয়া একজন নির্মাণ শ্রমিক। পুত্র সন্তানহীন শাহজাহানের ৬ মেয়েসহ ৯ সদস্যের সংসার। ইতিমধ্যেই লিজাসহ ৪ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সহায় সম্বলহীন হতদরিদ্র শাহজাহান মিয়া মেয়ের সংসারের কথা ভেবে বিয়াই বিয়াইনির নিকট যৌতুকের টাকা প্রদানে সময় ভিক্ষা চেয়েও ব্যর্থ হন।

এদিকে নিরুপায় কন্যাদায়গ্রস্ত শাহজাহান মিয়া সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম মিয়ার শরণাপন্ন হলে গত ১৬ মার্চ উভয় পরিবারকে নিয়ে এক সালিশি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে লিজার শ্বাশুড়ি মরিয়ম বেগম ও শ্বশুর জিয়াউর রহমানের নিকট যৌতুকের টাকা প্রদানে সময় প্রার্থণা করে গৃহবধু লিজাকে ঘরে তুলে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে তারা সাফ জানিয়ে দেন- নগদ টাকা না দেয়া পর্যন্ত বৌকে ঘরে তোলা হবে না।

এ ব্যাপারে লিজার স্বামী মেহেদি হাসান মোবাইলে ফোনে জানান, মা, বাবা যা করবেন সেটাই চূড়ান্ত। নববধূ লিজা আক্তার জানান, আমিতো সংসার করতেই চাই, কিন্তু বাবা’র অসহায়ত্বের কাছে আজ আমার সংসার ভাঙ্গতে বসেছে। লিজার বাবা শাহজাহান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, বিয়ের বছর পূর্ণ হলোনা, অথচ সাড়ে তিন মাস ধরে মেয়ে আমার বাড়িতে। আমি জামাইকে ১লক্ষ টাকা সমমূল্যের জমি বন্ধক নিয়ে দিতে চেয়েছি কিন্তু বিয়াই-বিয়াইনি তাতেও অসম্মতি জানিয়েছেন। আমি এখন আইনের আশ্রয় নেব।