রাজউকের ৬৬ ভাগ ভবনই অপরিকল্পিত : গণপূর্তমন্ত্রী

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় ৬৬ শতাংশ ভবনই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

বার্তা সংস্থা ইউএনবির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী এ তথ্য দেন বলে আজ রোববারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন নিহতের ঘটনার পর মন্ত্রীর কাছে থেকে এই তথ্য এলো।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও যাঁরা বিল্ডিং কোড মানেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে কিছু ভবনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া কিছু ভবন রয়েছে, যেগুলো সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছে মালিকরা।’

মন্ত্রী আরো বলেন, যদি কোনো ভবন অবৈধভাবে তৈরি করা হয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা নিলে তাঁদের মধ্যে দায়বদ্ধতা তৈরি হবে। এ ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভবন তৈরির মানসিকতাও পরিবর্তন হবে বলে জানান তিনি।

ভবন নির্মাণ পরিকল্পনার ব্যাপারে রেজাউল করিম বলেন, রাজউক এলাকায় ভবন নির্মাণের জন্য ১৬টির পরিবর্তে চারটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ভবন নির্মাণের পরিকল্পনায় জমি-সংক্রান্ত বিষয়ে অনুমোদন নিতে হবে। বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে (যেসব এলাকায় বিমানের চলাচল নেই, সেসব এলাকার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্রের প্রয়োজন নেই)। কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনের (কেপিআইএস) কাছাকাছি ভবন নির্মাণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তিপত্রও নিতে হবে (শুধু ১০ তলার ওপরে ভবন নির্মাণের জন্য)।

গণপূর্তমন্ত্রী আরো বলেন, ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করা হবে, যেটির মাধ্যমে সময় ও শ্রম বেঁচে যাবে। যে কেউ তাঁর বাড়িতে বসে মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে তাঁর পরিকল্পনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কাউকে আবেদনের জন্য সরকারি অফিসে যেতে হবে না। যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তবে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে।

এই সিদ্ধান্ত আগামী ১ মে থেকে বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী রেজাউল। তিনি আরো বলেন, ‘অনুমোদিত নকশা ও বিল্ডিং কোড ভঙ্গ করা হয়েছে কি না, তার জন্য পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা চালু করা হবে।’

রাজউকের অব্যবস্থাপনার কথা জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি ঢাকার উন্নয়নে পরিবর্তন নিয়ে আসব।’

এদিকে, কাজের গতিশীলতা আনতে রাজউককে ভাগ করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী রেজাউল করিম। তিনি জানান, ঢাকা থেকে সাভার, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকা পরিচালনা করা অসম্ভব। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি থাকলে দুই সিটি করপোরেশনের মতো রাজউককেও দুই ভাগে ভাগ করা হবে।’

রাজউকে জনবল কম থাকার ব্যাপারে রেজাউল করিম বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে লোক চাওয়া হয়েছে।’

ন্যাশনাল হাউজিং কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো ফ্ল্যাট কেনার পর যদি কেউ স্থানান্তর হতে চান, সে জন্য মালিককে কোনো ফি দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হবে শুধু ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করা।’

ন্যাশনাল হাউজিং পলিসি পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী রেজাউল করিম।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘জনদুর্ভোগ দূর করা, জনসাধারণের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তৈরি করা ও জনগণের হয়রানি বন্ধ করা আমাদের চ্যালেঞ্জ। ইনশাআল্লাহ আমরা এটিকে বাস্তবায়ন করতে পারব।’

ধুলা ও দুর্ঘটনা এড়াতে নির্মাণাধীন ভবনে কভার ব্যবহার করার জন্য শিগগির নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকার আশপাশে আটটি স্যাটেলাইট শহর নির্মাণের ব্যাপারে রেজাউল করিম বলেন, ঝিলমিল, পূর্বাচল ও উত্তরা ফেজ-৩-এর কাজ চলছে। কেরানীগঞ্জ ও আশুলিয়া এলাকায় আরো বেশি কাজ করা হচ্ছে।

পূর্বাচল ঢাকার সবচেয়ে আধুনিক, ডিজিটাল ও পরিবেশবান্ধব শহর বলে জানান গণপূর্তমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গুলশান ও বনানীতেও সব নাগরিক সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া বিপজ্জনক কোনো বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্লিনিকের জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে না।’

সেসব জায়গায় ভবন নির্মাণের নির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘কেউ নিজ ইচ্ছায় কোনো উঁচু ভবন নির্মাণ করতে পারবে না।’ এসবের জন্য কঠোর পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও জানান তিনি।