রাজধানীতে শেষ হলো “নগর ও নারী” শীর্ষক আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “নগর ও নারী” শীর্ষক আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও সমাপনী অনুষ্ঠান। সোমবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশ আয়োজিত এই বিতর্কে অংশ নেয় সারাদেশের শীর্ষস্থানীয় ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়।

শনিবার (৯ মার্চ) শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর মহাখালিস্থ ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে যেখানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি। এই বিতর্কে সার্বিকভাবে সহায়তা প্রদান করেছে ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাস।

নগরে বসবাসকারী নারীদের নানামুখী সমস্যা, শহুরে পরিষেবাগুলিতে, বিশেষতঃ পানি ও স্যানিটেশনে নারীর প্রতিবন্ধকতা ও তা সমাধানে করণীয় নিয়ে তারুণ্যের যুক্তি তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় “নগর ও নারী” বিতর্ক। পুরো আয়োজন জুড়ে শহুরে নারীদের জেন্ডার অসমতা ও বৈষম্য; ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বাস্থ্যবিধি, বাধা ও চ্যালেঞ্জসমূহ; জেন্ডার-সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন; জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা; জ্ঞান, দক্ষতা ও সচেতনতা; ক্ষমতা সম্পর্ক ও প্রয়োগ; এবং সম্পদে নারীর অভিগম্যতা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সংসদীয় পদ্ধতিতে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

পুরষ্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দুইশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাসিনা বারী চৌধুরী, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াটার এইড বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও কোয়ালিটি এসুরেন্স ডিরেক্টর আজমান আহমেদ চৌধুরী এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর খান। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে সাবেক-বর্তমান খ্যাতিমান বিতার্কিকবৃন্দসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতি প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জাতীয় নীতিমালা এবং কাঠামোর মধ্যে বিশদভাবে জেন্ডার সমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা এবং নীতিনির্ধারক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জেন্ডার বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির করার উপর জোরারোপ করেন।

প্রধান অতিথি হাসিনা বারী চৌধুরী, এমপি তার বক্তব্যে নারীর অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সকারের গ্রিহীত নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং নগরকে আরও নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে আরও গুরুত্ব সহকারে সরকারের বিবেচনা করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমি জাতীয় সংসদে এটা নিয়ে কথা বলব।”

ওয়াটার এইড বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও কোয়ালিটি এসুরেন্স ডিরেক্টর আজমান আহমেদ চৌধুরী তার বক্তব্যে নগরের নারীদের প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করা বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার উদাহরণ তুলে ধরেন এবং এর সমাধানকল্পে সরকারের বেশ কিছু নীতি সংশোধনসহ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৫ অর্জনে তরুণদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করার কথা বলেন। সুইডিশ সিডার সহায়তায় জেন্ডার অন্তর্ভুক্তি ও রূপান্তরমূলক ওয়াশের উপর ওয়াটার এইড পরিচালিত সাম্প্রাতিক এক মূল্যায়নের পর্যালোচনা করে আজমান চৌধুরী বলেন, “আমাদের নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগে আমাদের এখন সময় এসেছে নারীর চোখে দেখার। জেন্ডার সংবেদনশীল ও জলবায়ুসহিষ্ণু ওয়াশ পরিসেবা প্রসারের জন্য প্রধান সংস্থা এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা দরকার। এছাড়াও জেন্ডার বিষয়ে বাজেট বরাদ্দের জন্য বার্ষিক মাইলফলক নির্ধারণ ও মূল্যায়ন করা এবং ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা রাখাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ”।

মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর খান জেন্ডার-সমতা প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের আরও বেশি করে যুক্তির চর্চা করার আহবান জানান।

বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতি প্লাবন গাঙ্গুলী বলেন, “যেহেতু বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, শহুরে পরিষেবাগুলিতে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে নারীদের জন্য। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি সত্ত্বেও, তীব্র লিঙ্গ বৈষম্য রয়ে গেছে যা নারীদের কল্যাণ ও ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। শহরাঞ্চলে এর প্রকটতা বহুমুখী এবং জটিল। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের অগ্রগতির ধারা ভিন্ন ভিন্ন এবং জেন্ডার সমতা ইস্যুর ক্ষেত্রেও অগ্রগতি এক রকম নয়। এর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই নগর পরিকল্পনা এবং নীতির প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই আয়োজনের লক্ষ্য ছিলো শহরাঞ্চলের নারীদের বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো সম্পর্কে তরুণদেরকে উদ্দীপিত করা এবং শহুরে পরিষেবা প্রাপ্তিতে লিঙ্গ বৈষম্য প্রশমিত করার জন্য তরুণদের যুক্তিগুলো তুলে ধরা। আগামীতে লিঙ্গ-সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশব্যাপী তরুণদেরকে, বিশেষতঃ শিক্ষার্থীদেরকে যুক্তিচর্চায় সম্পৃক্ত করার জন্য বিডিএফ তাদের ধারাবাহিক চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।”

চূড়ান্ত পর্বে বিতর্কের প্রস্তাবণা ছিলো, এই সংসদ মনে করে, নারীবান্ধব নগরী কেবলই একটি বিজ্ঞাপন। সরকারী দল বিইউপির বিতার্কিকরা দাবি করেন, নগরীতে নারীদের জন্য গণপরিবহন, পাবলিক টয়লেটসহ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তাই নারীরা যোগ্যতা ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করতে পারছে না। বক্তারা আরো বলেন, নারীবান্ধব নগরীর যেই বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে, বাস্তবে নারীদের জন্য সেই সকল সুযোগ তৈরি করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে না। অপরদিকে বিরোধী দল- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকবৃন্দ সরকারী দলের যুক্তিখন্ডন করে বলেন, সীমিত সম্পদ নিয়েও সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নারীবান্ধব বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন পরিসরে আগের তুলনায় নারীদের অন্তর্ভুক্তির হার বেড়েছে।

বিচারকদের রায়ে ফাইনাল বিতর্কের শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক রাগীব আনজুম এবং প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক হয়েছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক ফাতিমাতুজ জোহরা।