রাজশাহীতে দুই কৃষকের ‘গামছা’য় দুর্ঘটনা এড়ালো ট্রেন

রাজশাহীর রেলপথে দুর্ঘটনা যেন কমছেই না। শতবর্ষী রেললাইনগুলো যেন আতঙ্কের জায়গা হিসেবে পরিণত হয়েছে। এবার অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ঢাকাগামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এলাকায় রেললাইন ভাঙা দেখতে পেয়ে লাল গামছা টাঙিয়ে ট্রেনটিকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেন স্থানীয় দুই ব্যক্তি।

রাজশাহী রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেটিতে প্রায় সাড়ে আটশত জন যাত্রী ছিল। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জিয়াউর রহমান ও হাবলু মিয়া নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি রেললাইনের পথ দিয়ে কৃষি কাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁরা লাইনের এক অংশে ভাঙা দেখতে পান। সকালে রেললাইন দিয়ে অনেক ট্রেন চলাচল করে। এ জন্য তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে বুদ্ধি করে লাইনের মাঝখানে নিজেদের লাল গামছা টাঙিয়ে দেন।

এই লাল কাপড় দেখে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি থেমে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রেল লাইন মেরামত করার পর ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘স্থানীয় দুই ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ঢাকাগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। লাইন মেরামত করার পর বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’

জানা যায়, রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার রেললাইনের ত্রæটির কারণে মাঝে মধ্যেই ট্রেন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। এতে স্থানীয়রা ও ট্রেন যাত্রীরা চরম উৎকণ্ঠা মধ্যে থাকেন।

স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় প্রতি সপ্তাহেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ট্রেন। ভাগ্যগুণে যাত্রীরা বেঁচে গেলেও যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় রকমের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার রেললাইনগুলো ব্রিটিশ আমলে তৈরি। শতবর্ষী এই লাইনে সারা দিনে ৩২ বার ট্রেন চলাচল করে। অনেক সময় রেললাইনে বেশি চাপ পড়ায় লাইনগুলোর বিভিন্ন স্থান ভেঙে যাওয়াতে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ছে। বড় ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে রেল লাইনগুলো দ্রæত সংস্কার করা প্রয়োজন।’

রাজশাহী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (আইএন) আবু জাফর বলেন, ‘এ এলাকার লাইনগুলো অনেক পুরোনো। স্টিলের ও কাঠের স্লিপারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। কংক্রিটের স্লিপার হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। আমরা নতুন লাইন স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। বরাদ্দ পেলে বাস্তবায়ন করা হবে।’