রুশ তেল আমদানিতে বিকল্প উপায় খুজছে সরকার

সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় পরিশোধে বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে। তবে, রাসায়নিক সার ও ভোগ্য পণ্য আমদানি ব্যয় মেটানো হবে মার্কিন ডলারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, রুশ তেল অমদানি ব্যয় আপাতত নিজ নিজ মুদ্রায় করা হবে। দু’দেশের রফতানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো হবে। এর বাইরে যে অংশটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা তিন মাস অন্তর তৃতীয় কোনো মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে। তবে, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এখনো দুদেশের মধ্যে চিঠি চালাচালির মধ্যে রয়েছে।

জানা গেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জড়ানোর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্রায় ২০টি রুশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে বেশিরভাগই রুশ সরকারি ব্যাংক। এ অবস্থায় রুশ জ্বালানি তেল অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে তাদের নিজস্ব মুদ্রায় বিভিন্ন দেশের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশ রুশ তেল আমদানি করা হচ্ছে। যদিও ভারত ইতোমধ্যে রুশ তেল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে মস্কভিত্তিক কোম্পানি রুসনেফট। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছে প্রতি ব্যারেল পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ৫৯ ডলারে বিক্রি করতে প্রস্তাব করেছে। যেখানে বর্তমান বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় কোনো দেশের সাথে জ্বালানি তেল আমদানি করলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে তেল আমদানি করা হলে ওই দেশের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে। এ কারণে সরাসরি পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আর সেক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ব্যয় কোন মুদ্রায় করা হবে তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিজ নিজ মুদ্রায় রফতানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানোর পক্ষে মতামত নেয়া হচ্ছে। আর সেক্ষেত্রে রাশিয়ার কোনো ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকের সাথে স্থানীয় মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট করবে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান রুশ প্রতিষ্ঠান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করলে স্থানীয় মুদ্রায় ওই অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করবে। আবার বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য রফতানি করলে সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যাংকে ওই দেশের মুদ্রা রুবলে অ্যাকাউন্ট করবে। ওই অ্যাকাউন্টে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের রফতানি বিল রুবলে পরিশোধ করবে। এভাবে রফতানি ও আমদানি ব্যয় সমন্বয় করার পর যে অংশটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা তিন মাস অন্তর তৃতীয় কোনো মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় বেশি পরিমাণ পণ্য রফতানির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে নিয়মিত রফতানির বাইরে রাশিয়ায় ওষুধ রফতানির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, খাদ্য, ভূমি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর বাইরে স্কয়ার, বেক্সিমকো, একমি, এসিআই, রেনাটা ও ইনসেপ্টার শীর্ষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আমদানির ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধ পদ্ধতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রী। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ায় ওষুধ রফতানি করার বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে ভোগ্যপণ্য ও রাসায়নিক সার আমদানির ব্যয় ডলারে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। আর রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা হলে তার ব্যয় কোন মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তবে, এ বিষয়ে গতকাল চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি পর্ষদ সভায় আলোচনা করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্জিত রফতানি আয়ের মাধ্যমে আমদানি ব্যয় পরিশোধের একটি রূপরেখা তৈরী করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।