রোহিঙ্গায় অনিরাপদ হয়ে উঠছে কক্সবাজার

দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে কক্সবাজার। প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটছে হত্যা, অপরহণ, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, হামলা ও মারামারির মতো ঘটনা। নিয়মিত অপরাধ সংগঠিত হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা। এরই মধ্যে ক্যাম্পের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নির্বিঘ্নে বের হয়ে কক্সবাজারের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। কেউ কেউ কাজের সন্ধানে থাকলেও এসব রোহিঙ্গাদের অনেকে পর্যটন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে।

গত ১৪ জানুয়ারি পর্যটন শহরের একটি আবাসিক হোটেলে রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ে উপলক্ষে শতাধিক রোহিঙ্গার উপস্থিতি নিয়ে ফের আলোচনায় এসেছে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি। এছাড়া ২৯ ডিসেম্বর সৈকতের লাবণী পয়েন্টে একদল পর্যটকের সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া তরুণরাও ছিল রোহিঙ্গা। ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা পর্যালোচনা করে রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা শংকার বিষয়টি প্রতিনিয়িত সামনে আনছেন স্থানীয়রা। ক্যাম্প ছেড়ে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছে এপিবিএন।

এপিবিএনের একাধিক চেকপোস্ট থাকার পরও রোহিঙ্গাদের নির্বিঘ্নে বের হওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। এজন্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতাকে দায়ী করেছেন তারা। কক্সবাজার শহরে রোহিঙ্গা কিশোর ও যুবকদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কথা স্বীকার করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা।

জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, অস্ত্র, মাদক এবং খুনসহ ১১ অপরাধের ঘটনায় গেলো চার মাসে ৫৯১টি মামলা হয়েছে রোহিঙ্গা অপরাধীদের বিরুদ্ধে। যেখানে আসামি করা হয়েছে এক হাজার ৭৬২ জনকে। মোট মামলার ২৬২টি শুধু মাদক সংক্রান্ত মামলা। হত্যা মামলা রয়েছে ৫৫টি।

তথ্য মতে, গত ১৪ জানুয়ারি কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের আয়োজন হচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬৫ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন বিদেশি পাসপোর্টধারী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা ছাড়া এসব রোহিঙ্গারা কীভাবে ক্যাম্প থেকে কক্সবাজার শহরে পৌঁছালো তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এর আগে ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজারের কলাতলীর ডিসি পাহাড় সংলগ্ন আদর্শগ্রামের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির ৪ দশমিক ৯ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ১৫টি ককটেল, আইইডি তৈরির সরঞ্জাম, ১ দশমিক ৫ কেজি পারদ, ১টি ওয়াকিটকি, ৫৩টি সার্কিট, ৯ বান্ডিল সামরিক পোশাক তৈরির কাপড়, ৭০টি গেঞ্জি, ১২টি টুপি, ১৩০টি হ্যান্ড গ্লাভস, ২ হাজার ২৯০ টাকা, ২টি মুঠোফোন ও ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। এ সময় আরসা’র লজিস্টিক শাখার প্রধান হাফেজ রহমত উল্লাহসহ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে র্যাব। ২৯ ডিসেম্বর ভোরে ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের মাত্র ৫০০ ফুট দূরত্বে পাঁচ পর্যটক ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার তিনজনই রোহিঙ্গা তরুণ বলে জানিয়েছেন টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।

কক্সবাজার জেলা বারের আইনজীবী বাপ্পী শর্মা বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে নানা অপরাধেও জড়াচ্ছেন। সম্প্রতি আদালতে সবচেয়ে বেশি মামলা হচ্ছে রোহিঙ্গা অপরাধের। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে এবং শৃঙ্খলাবাহিনী আরও একটু সচেতন হলে অপরাধের মাত্রা কমে আসবে।